(ছবি- হারুন রাশিদ ও নূরুল হুদা মুকুট)

বিশেষ প্রতিবেদকঃ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি নূরুল হুদা মুকুটকে এক সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিস্কারের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরন করেছিলো সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। মুকুট ২২ সালের ১৭ অক্টোবরের সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট খাইরুল কবীর রুমেনের বিরোদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বলে। দলের তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট এর আগে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন দলীয় মনোনয়ন পান। সে সময় দলের বিরোধিতা করে নুরুল হুদা মুকুট দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়। কেন্দ্রীয় ভাবে সীদ্ধান্ত হয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ আগামীতে দলের কোন কমিটিতে পদ পদবী পাবেন না কিংবা কোন নির্বাচনে দলের প্রার্থী হতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সালের নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না পেয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, নির্বাচনের আগে তাদের প্রতি সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় আওয়ামী লীগ প্রধান স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘দল সমর্থিত একক প্রার্থীর পক্ষে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহীদের আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’

১৬ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ১১ জন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। নুরুল হুদা মুকুট তাদের একজন। এবারের নির্বাচনে তাদের বেশীর ভাগ সদস্য দলীয় সমর্থন চেয়েছিলেন। তবে তাদের কেউ দলের সমর্থন পাননি। এ কারনে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট ও বাদ পড়েন।

সেই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হওয়া শতাধিক নেতার অনেকে এবার সমর্থন চেয়েছিলেন, তাদের কাউকেও আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয়নি। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আওয়ামী লীগ আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, বিদ্রোহী কাউকে দলীয় মনোনয়ন কিংবা সমর্থন দেবনা।

পরবর্তীতে কোন এক রহস্যজনক কারনে দেখা যায় দল বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয়। কেন্দ্র স্বীদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিলেন তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে না কিন্তু কঠোরতা বহাল থাকবে। দলের এই নমনীয় ভুমিকার সুযোগে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আবার দলে সক্রিয় হয়ে উঠেন । সেই সাথে দলের প্রতি অনুগতরা কোনঠাসা হয়ে পড়েন।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য অনুষ্ঠিত ফেব্রুয়ারীর সম্মেলনে বারবার দলের বিরোধিতাকারী বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুট জেলা সভাপতি মনোনীত হওয়ায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট অনেকে তাই মনে করছেন। দলের এই পিছুটানে অনেকে অবাক হয়েছেন। মুকুটের জেলা সভাপতি হিসাবে মনোনয়নকে বিদ্রোহীকে তিরস্কার নয় পুরুস্কার হিসাবে দলের নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন করছেন।

তৃণমূল নেতাকর্মিরা ভাবছেন দলের এই আত্মঘাতী সিদ্বান্ত আগামী সাধারন নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। বিদ্রোহী হয়ে যদি সহজে পার পাওয়া যায় তাহলে আগামীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে কেউ দ্বিধাবোধ করবে না। তারই প্রতিফলন দেখা যায় সদ্য সমাপ্ত জগন্নাথপুর উপজেলা চেয়ারম্যান উপ নির্বাচনে। উপজেলার সাবেক সহ-সভাপতি হারুন রাশিদের বিদ্রোহী প্রার্থীতা সেই বার্তা দেয়। সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম দলী প্রতীক নৌকা পেলে হারুন রাশিদ দলের বিরোধিতা করে নৌকার প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হারুন রাশিদকে ডাবল শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী জেলা সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট ও সাধারন সম্পাদক নোমান বখত পলিন স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তাকে কেন দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি ও তার বিরোদ্ধে শাস্তি মুলক সাংগঠনিক ব্যবস্থ গ্রহন করা হবেনা কারন দর্শাতে বলা হয়েছে?

নুরুল হুদা মুকুট যিনি এক সময় নিজে অপরাধী ছিলেন তিনি এখন আরেক অপরাধীকে শাসাচ্ছেন। গনতন্ত্র, বর্নবাদ, মানবাধিকারের প্রশ্নে খোদ আমেরিকা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে তারা আসে বাংলাদেশকে গনতন্ত্র, মানবাধিকার শিক্ষা দিতে।চোখ রাঙাতে। সুনামগঞ্জ আওয়ামীলীগ ঠিক তেমনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীকে “শোকজ” করে ডাবল শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn