মাত্র আট বছর বয়সে মা ও ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহকে নিয়ে নতুন করে জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন।  তার এই জীবন সংগ্রামে কখনও খালার বাসায় থেকে, কখনও টিউশনি করে, কখনও বা পার্টটাইম কাজ করে নিজে পড়াশোনা করেছেন। অন্য দুই ভাইকেও বানিয়েছেন কোরআনের হাফেজ।রাজীবের স্বপ্ন ছিল- বিসিএস দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে যাওয়ার। দেশের নামকরা শিক্ষক হওয়ার। ছোট দুই ভাইকে আরও পড়াশোনা করিয়ে বড় করার। কিন্তু সে স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করা হলো না তার।রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানোর পর ১৩ দিন হাসপাতালের বেডে মৃত্যু সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হলো একুশ বছরের এই এতিমকে। সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা রাজীবের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ এখনও হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। রাজীবের মেজ খালা লিপি আকতার জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতালে সব প্রক্রিয়া শেষ করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজীবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। সেখানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হবে তাকে।

উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটে সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে গা ঘেঁষে অতিক্রম করে। এ সময় দুই বাসের প্রবল চাপে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীবের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এতে তার মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত লাগে। দুর্ঘটনার পর তাকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতালে ও পরে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) ভোর পৌনে ৪টায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রাজীব। এরপর ওই দিন সকাল ৮টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn