হাসান হামিদ-

আমরা যারা সাধারণ জনতা; রাজনীতি বুঝি না, শুধু চেয়ে দেখি আর অবাক হই! কয়েকদিন ধরে লক্ষ করছি, ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে অন্যকে ঘায়েল করার, বিশেষ করে সাংবাদিক হয়রানির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তথ্য-প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা। আর তাতে সহযোগিতা করছেন অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। সারা দেশের সাংবাদিক সমাজ এই ধারার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরেই, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এর সর্বশেষ শিকার হয়েছেন খুলনার সাংবাদিক আবদুল লতিফ মোড়ল।

প্রকাশিত খবর থেকে আমরা জেনেছি, স্থানীয় পত্রিকায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বিতরণ করা একটি ছাগলের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছিল। আবদুল লতিফ মোড়ল খবরটি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। তাতে নাকি প্রতিমন্ত্রীর মানহানি হয়েছে। সে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে খুলনারই আরেক সাংবাদিক ডুমুরিয়া থানায় সোমবার রাত ৯টায় একটি মামলা করেন এবং রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ লতিফ মোড়লকে ডুমুরিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। প্রায় দুদিন কারাগারে কাটানোর পর বুধবার বিকেলে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগেও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক একই ধরনের হয়রানি বা  হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

এটা তো সবাই জানি যে, সত্য তুলে ধরাই সাংবাদিকদের কাজ। সেই সত্য কখনো কখনো কারো কাছে  প্রীতিকর না-ও মনে হতে পারে। কাউকে ক্ষুব্ধও করতে পারে। কেউ ক্ষুব্ধ হতে  পারেন বলে সাংবাদিকরা কি সত্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন? তাহলে সাংবাদিকতা কি অর্থহীন হয়ে পড়বে না? দেশের মানুষও নিশ্চয়ই তা আশা করে না। তাহলে সাংবাদিকরা কেন এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন? সেটি আবার বাছাই করে করে কেন?

খুব দুঃখ হয় এটা ভেবে যে, যেই পত্রিকাটি এই সংবাদ প্রকাশ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যিনি ফেসবুকে খবরটি শেয়ার করেছিলেন তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো? হতে পারে যে সাংবাদিক মামলাটি করেছেন, তাঁর কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল। কিন্তু মামলাটি করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর মানহানির কথা বলে। এ ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়াই জানা যায়নি। এতে কি তাঁর সুনাম বৃদ্ধি হয়েছে? তিনি যে সরকার বা দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, তারা কি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না? ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘটনাটিকে ৫৭ ধারার অপব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতে পুলিশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। খুন, রাহাজানিসহ প্রতিদিন শত শত অপরাধের ঘটনা ঘটছে। সেসব অপরাধীকে ধরার ব্যাপারে পুলিশের অবহেলা ও ব্যর্থতা ব্যাপকভাবে আলোচিত একটি বিষয়। অথচ এ ক্ষেত্রে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ কী কৃতিত্বই না দেখাল! পুলিশ বিভাগও তা উপলব্ধি করছে বলেই মনে হয়। তাই ডুমুরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো থানায় আইসিটি আইনে মামলা নেওয়ার আগে পুলিশ সদর দপ্তরের আইন শাখার পরামর্শ নিতে হবে। খুলনার ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এ উদ্যোগগুলো আরো আগে নেওয়া হলে হয়তো লতিফ মোড়ল এমন হয়রানির শিকার হতেন না।  সাধারণ জনগণ আশা করে,  সত্য সাংবাদিকতা করার জন্য সারা দেশে আর একজন সাংবাদিকও হয়রানির শিকার হবেন না এবং ৫৭ ধারার অপব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হবে। হবে না?

(লেখক- গবেষক ও কবি)

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn