শ্যামল সরকার-দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে চলছে যাচ্ছে তাই অবস্থা। কে কখন কোন কাজে কোন দেশে কতবার যাচ্ছেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সংরক্ষিত নেই। ফলে একজন কর্মকর্তা ঘনঘন বিদেশ যাত্রার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার অনেকে বছরে একবারও বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান না। জানা গেছে, বিদেশ সফর সংক্রান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সার-সংক্ষেপে বাত্সরিক ভ্রমণের তথ্য দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না। অভিযোগ আছে- অনেকে তথ্য গোপন করে বারবার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ নিচ্ছেন।  এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, একজন সচিব বছরে চারবার বিদেশ যেতে পারবেন। মন্ত্রী-সচিবের একইসঙ্গে বিদেশ সফরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে গত এক বছরে একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৭৫ বার বিদেশ সফর করেছেন এমন ঘটনাও আছে। আবার অনেকে মোটেও যেতে পারেন নাই- তেমন ঘটনাও রয়েছে। যদিও নীতিমালা অনুযায়ী সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে; কিন্তু তা অমান্য করেই খেয়ালখুশি মতো বিদেশ সফর চলছে। তিনি মনে করেন- এর রেশ টানা দরকার এবং সে জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন- মন্ত্রী বা সচিব কেউই যদি অফিসে না থাকেন তবে কাজকর্মে বিঘ্ন হয়। এদিকে গত ৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি সকল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মকর্তারা বিগত এক বছরে কতবার ভ্রমণ করেছেন সে বিষয়ে তথ্যবিবরণী দাখিল করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

জানা গেছে, আগে প্রধানমন্ত্রী কোনো কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ অনুমোদন করলে সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পিএসিসি-তে তথ্য সংরক্ষণ করা হতো। এখন সেখানে কোনো তথ্যই প্রদান করা হয় না। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ শাখা, শিক্ষা ছুটি, লিয়েন সম্পর্কিত কিছু তথ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে; কিন্তু কে কতবার কোন ধরনের ছুটিতে যাচ্ছেন তার কোনো তথ্য প্রধানমন্ত্রীর বরাবর প্রেরিত সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয় না। মূলত তথ্য গোপন করে বিদেশ গমনের প্রবণতা থেকেই তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্মকর্তাদের এমন যথেচ্ছ বিদেশ গমনে কাজ-কর্মে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজের সুবিধার জন্য উইং রয়েছে। একটি উইং থেকে একজন কর্মকর্তার অনুপস্থিতির জন্য দেখা যায় নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো ঝুলে থাকে। তবে রুটিন কাজের ক্ষেত্রে ভিন্ন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আবার দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু বিশেষায়িত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সচিব থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই বেশি বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান। এসব মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, দপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরও বিদেশ ভ্রমণে জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া মন্ত্রী-সচিবের একইসঙ্গে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিতই থাকছে।  কিছু মন্ত্রণালয়ের সচিব আছেন, যারা একটি দেশ থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে অপেক্ষা করেন আরেকটি দেশে যাওয়ার জন্য। অর্থাত্ তাদের জন্য ঢাকা ‘ট্রানজিট বিমানবন্দর’। কিছু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীর ক্ষেত্রেও এমন দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।

সাধারণ ভাবে বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য কর্মকর্তারা বিদেশে যান। শিক্ষা লাভের জন্যও অনেকে বিদেশ যান। উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকরা বিদেশি অর্থায়নের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা বা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাস্তব শিক্ষা লাভের জন্যও বিদেশ যান। অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, অনেকে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন যে মন্ত্রণালয়ের জন্য, দেশে ফেরার পর বা আগেই তাদের সেখান থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে যেতে হয়। ফলে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান সরকারের কোনো কাজে লাগে না। যদিও বিদেশ থেকে ভ্রমণ শেষে কর্মকর্তারা সফরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিশাল ফিরিস্তি মন্ত্রণালয়ে জমা দেন; কিন্তু তা কেউ পড়ে দেখেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অভিযোগ রয়েছে, গত এক বছরে চার থেকে পাঁচটি মন্ত্রণালয় থেকে সচিব বা অন্যান্য স্তরের কর্মকর্তা কমবেশি ৪৪ থেকে ৫০ বার করে বিদেশে গেছেন। অবশ্য সরকারি উদ্দেশ্য ছাড়াও বিদেশে পড়াশুনা করা ছেলে-মেয়েদের দেখতেও যান অনেকে। অবার অনেকে চিকিত্সার জন্যও যান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn