বার্তা ডেক্স :: প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার পাতন গ্রামে পা দিতেই চোখে পড়ে সারি সারি আলিশান সব বাড়ি। কোথাও সমতল সবুজের মাঝে, আবার কোথাও টিলার ওপর বিশাল প্রাচীরঘেরা কারুকার্যময় প্রাসাদতুল্য বাড়ি। কোটি কোটি টাকা খরচে প্রবাসীরা তৈরি করেছেন এসব বাড়ি। সারা বছর বাড়িগুলো জনশূন্য থাকলেও এগুলোর নির্মাণে রয়েছে কতো টাকা বেশি খরচ করা যায় এমন প্রতিযোগিতার ছাপ। এ প্রতিযোগিতা বাড়ির ভিতর থেকে শুরু করে ফটক পর্যন্ত। বিয়ানীবাজারই নয় শুধু, সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর উপজেলায়ও প্রবাসীদের নির্মিত প্রাসাদোপম বাড়িগুলো পড়ে আছে ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায়। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুযোগ না পেয়ে সিলেটের যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা তাদের অলস টাকা খরচ করে নির্মাণ করছেন এসব বাড়ি।

ব্যবসায়ীদের অভিমত, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বানানো ‘পরিত্যক্ত’ এসব বাড়ি সিলেটের অর্থনীতিতে কোনো কাজে আসছে না। তারা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ট্যাক্স হলিডে সুবিধা পেলে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে প্রবাসীরা বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। তখন হয়তো বাড়ি নির্মাণে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে শিল্পখাতে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে প্রবাসীদের। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, শিল্পকারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সিলেট এখনও অনেক পিছিয়ে। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুযোগ না থাকায় আগ্রহ থাকার পরও সিলেটে বিনিয়োগ করতে পারছেন না প্রবাসীরা। একসময় আবাসন খাতে প্রবাসীরা বিপুল বিনিয়োগ করলেও এ ব্যবসায় ক্রমেই ধস নামায় মুখ ফিরিয়ে নেন তারা। এ ছাড়া প্রবাসীদের বিনিয়োগে সিলেটে বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানও গড়ে ওঠে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এসব বিপণিবিতানও ব্যবসায়িক সফলতার মুখ দেখেনি। এ অবস্থায় এ খাতে বিনিয়োগ থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেন প্রবাসীরা। গ্রামের বাড়িতে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণেই ব্যয় করেন ব্যাংকে পড়ে থাকা তাদের অলস টাকা।

সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, মুখ ফিরিয়ে নিলেও এখনও প্রবাসীদের বিনিয়োগে আগ্রহী করা সম্ভব। সুষ্ঠু পরিবেশ ও বিনিয়োগ ফেরতের নিশ্চয়তা পেলে তারা সিলেটে বিনিয়োগ করবেন। প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করা না গেলে ভবিষ্যতে এসব পরিবারের সঙ্গে দেশের সম্পর্কই থাকবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। যুক্তি হিসেবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সিলেটের যেসব প্রবাসী এখন সপরিবার ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করছেন তাদের সন্তানরা দেশের ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের যুক্ত করা না গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন এই প্রজন্মের সম্পর্কে ভাটা পড়তে পারে। তারা সিলেট তথা বাংলাদেশের পরিবর্তে বিশ্বের অন্য স্থানে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

সিলেটে প্রবাসী বিনিয়োগের সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ সিলেটভিউ২৪ডটকমকে বলেন, ‘সিলেটে শিল্পকারখানা হচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে বিসিক ও বিসিকের বাইরেও নতুন করে কেউ শিল্পকারখানা স্থাপন করছেন না। শিল্প খাতের বিকাশ ঘটানো গেলে প্রবাসীদের বিনিয়োগে আগ্রহী করা যেত। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য বিশেষ ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন স্থাপন করা গেলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসী উদ্যোক্তাদের দেশের প্রতি আকৃষ্ট করা যাবে। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করতে চান, কিন্তু রাষ্ট্রীয় কিছু জটিলতা ও উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা নিরুৎসাহিত হন।’

এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, ‘পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে প্রবাসীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে কোনো লাভ নেই। তাদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। প্রবাসীদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতে সিলেট চেম্বার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। কিন্তু তারা যে সুযোগ চান তা চেম্বারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাদের সমস্যা সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।’ প্রবাসীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে ট্যাক্স হলিডে (নির্দিষ্ট কয়েক বছরের জন্য করমুক্ত থাকার সুযোগ) প্রদানের দাবি জানিয়ে চেম্বার সভাপতি সিলেটভিউ২৪ডটকমকে বলেন, ‘প্রবাসীরা শিল্পকারখানা স্থাপন করতে চাইলে তাদের গ্যাস ও বিদ্যুতের শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকৃত টাকা বা প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বিদেশে ফিরিয়ে নিতে জটিলতা হবে না এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।’ সরকারের পক্ষ থেকে এমন সুযোগ-সুবিধা ও নিশ্চয়তা পেলে প্রবাসীরা কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি না বানিয়ে শিল্প খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন চেম্বার সভাপতি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn