সিলেট :: ফটোকপির আড়ালেই চলত সক্রিয় ভুয়া পাসপোর্ট, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড তৈরির চক্র। আর তা দিয়েই একজন বিদেশি হয়ে যেতেন ভারতীয়, কেউ কেউ আবার সোজা বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে বলে অভিযোগ। অবেশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লো চক্রের এক সদস্য। তদন্তে নেমে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা পুলিশের তদন্তকারী সদস্যদের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সোদপুর এঞ্জেলস নগরে অভিযান চালিয়ে সৈয়দ আহমেদ (২২) নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করে টিটাগড় থানার পুলিশ। তার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় নি। পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর, গত প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এঞ্জেলস নগর এলাকায় প্রবীর বিশ্বাসের বাড়ির নিচের তলায় ভাড়া থাকতেন ওই বাংলাদেশি যুবক। ভোরের আলো ফুটতেই সে বেরিয়ে যেত আর ফিরত সেই রাতে। স্থানীয় রাজা রামচাঁদ ঘাট রোডের বিপ্লব শর্মার একটি দুধ ও জেরক্স’এর দোকানে বসেও সময় কাটাতো বলেও জানা গেছে। সৈয়দ আহমেদের সঙ্গে ওই বাসা বাড়িতে আরও এক বাংলাদেশি যুবক থাকতো বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই বাংলাদেশিদের ফোনে প্রায়ই বিদেশ থেকে ফোন আসতো। তারা প্রায়ই বাংলাদেশ, ইউরোপের কথা বলতো। কিন্তু তাদের ভারতে থাকার বৈধ নথি দেখতে চাইলে তা তারা দেখাতো না। তাছাড়া তাদের কথা-বার্তাতেও সন্দেহ হচ্ছিল। এরপরই স্থানীয় এক বাসিন্দা পুলিশকে গোটা বিষয়টি জানান। পরে সোমবার রাতে ওই ভাড়া বাড়িটিতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি ভুয়া পার্সপোট, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, বেশ কয়েকটি মোবাইল সিম। রাতেই আটক করা হয় আহমেদ খানকে। যদিও ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরেক সদস্য পলাতক। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৫, ৪৬৮, ৪৭১, ১৪ ফরেনারস অ্যাক্টসহ বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 
আটক করা যায়নি অভিযুক্ত বাড়ির মালিক প্রবীর বিশ্বাস এবং ফটোকপি দোকানের মালিক বিপ্লব শর্মাকেও। তাদেরও খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। আটক বাংলাদেশি যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে বেশ কিছুদিন ধরেই তারা এঞ্জেলস নগরের ওই বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানেই ভুয়া পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, আর্ধার কার্ড তৈরি করত এবং আহমেদের সাহায্যেই একাধিক ব্যক্তিতে বিদেশেও পাঠান হতো। এও জানা গেছে ওই ফটোকপির দোকান থেকে ভুয়া ভারতীয় বিভিন্ন পরিচয়পত্রের জেরক্স করাতো অভিযুক্ত ব্যক্তি। পুলিশি অভিযানে স্থানীয় পানিহাটি পৌরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার এর স্বাক্ষর করা ভুয়া রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটও উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে ওই কাউন্সিলার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় তাদের স্বাক্ষর করা পুরো সনদগুলিই ভুয়া। পুলিশ সূত্রে খবর, দুই বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে আসে আটক বাংলাদেশি যুবক আহমেদ খান। তার সাথে আন্তর্জাতিক ভুয়া পাচারচক্র বা জঙ্গি যোগ রয়েছে তা নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিশ। মঙ্গলবারই আটক সৈয়দ আহমেদকে ব্যরাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। এদিন আদালতে যাওয়ার পথে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করে জানান, বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার ওই পলাতক সঙ্গীটিই এই সমস্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে জানায় সে। পুরো ঘটনায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে খড়দা থানার পুলিশ।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn