ওয়েছ খছরু-

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী সফরকে কেন্দ্র করে সিলেটে ঘুরে ফিরে প্রশ্ন একটাই- সিটি ও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কারা? কেউ কেউ বলছেন- প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এই সফরে সুনির্দিষ্ট কোনো ইঙ্গিত আসতে পারে। সেই আশায় বুক বেঁধে  আছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন- প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এখনই সেই ঘোষণা বা ইঙ্গিত আসবে না। এর কারণ- আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কেবল প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকে। প্রধানমন্ত্রী কখনো একক সিদ্ধান্তে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেননি। এই মুহূর্তে সিলেটে সিটি নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে।প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পর ফেব্রুয়ারি থেকে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে সিলেটের মেয়র প্রার্থী কে হবেন- সে নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে- ইতিমধ্যে সিলেটের ভোটের মাঠে প্রায় পরিষ্কার হয়ে গেছে, সিলেটে এবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। কয়েক মাস আগেই ঢাকায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কামরানকে সে ইঙ্গিত দেয়া হয়। এ কারণে কামরান আটঘাট বেঁধে ভোটের মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধভাবে ‘ফোকাস’ দিচ্ছে কামরানের দিকে। তবে- দলের ভেতরে মেয়র প্রার্থী আরো রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। আসাদ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘সিলেটে এসে প্রধানমন্ত্রী কারো নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার রীতি অতীতে দেখিনি। নির্বাচনী বোর্ড প্রার্থী ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী এবার সিলেটে এসে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চাইতে পারেন।’ এদিকে- প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি গতকালও এক সভায় বলেছেন- সিলেট আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয়েই দলের সব নেতাকর্মীরা সিলেটে নির্বাচনী মাঠে নামবে। সিলেট আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে- গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কামরানের পরাজয়ের নেপথ্যে সিলেট আওয়ামী লীগে কোন্দলের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছিল। আওয়ামী লীগের একাংশ কামরানের পক্ষে কাজ করেননি বলে রাজনৈতিক মাঠে ঝড় উঠে। এরপরও গত নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র এখন ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে কামরান। তিনি আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে প্রস্তুত।  প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে উপলক্ষে সিলেটে যে প্রস্তুতিপর্ব চলছে সেটাতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন কামরান। প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ৮৪তম জন্মদিনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। প্রায় দুই বছর আগে একবার অর্থমন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে তিনি নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। ফলে সিলেট-১ আসনের প্রার্থিতা নিয়ে চুপ ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু জন্মদিনে অর্থমন্ত্রী নতুন করে ঘোষণা দেয়ায় ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ আসনে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে ‘রিহার্সেল’ দিয়ে ফেলেছেন অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই ড. একে আবদুল মোমেন। প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়েছে। এখন তিনি সিলেট আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর বিকল্প হিসেবে তিনি সিলেটের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছেন। সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ড. মোমেনের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন- ড. মোমেন সিলেটের মানুষের সঙ্গে কথা বলে সিলেটের আগামী উন্নয়নের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। সিলেটকে আরো উন্নত করতে তিনি কাজ করছেন। সেখানে তিনি অর্থমন্ত্রীর সাহায্যও পাচ্ছেন। তবে- ড. মোমেন নিজ মুখে কখনোই সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেননি। কিংবা অর্থমন্ত্রীর তরফ থেকেও কোনো ঘোষণা আসেনি। কিন্তু কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন ড. মোমেন। আর নির্বাচনের বিষয়ে তিনি নিজ থেকেই আড়ালে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কোনো সিগন্যাল পেলে নির্বাচনী মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মাঠে থাকলেও নিজ মুখে কিছু না বলে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগেরও একটি বড় অংশ ড. মোমেনকে নিয়ে ইতিমধ্যে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগে ড. একে আবদুল মোমেন ছাড়াও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের নাম আলোচিত হচ্ছে। ছহুল হোসাইনও নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতি নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে- ছহুল হোসাইনের বিষয়টি এখনো সিলেটে পরিষ্কার হয়নি। সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে টক্কর দিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি প্রায় ৫ বছর আগে থেকেই সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হতে কাজ করছেন। অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ নিজ মুখেও বলেছেন তিনি সিলেট থেকে নির্বাচন করতে চান। কিন্তু কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান সেটি বলেননি। প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমন উপলক্ষে গতকালও সিলেটে প্রেস ব্রিফিং করেছেন অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ওই প্রেস ব্রিফিংয়েও তিনি সিলেটের সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn