ওয়েছ খছরু–অভ্যন্তরীণ বিরোধে পরপর দু’দফা সিলেট নগর নির্বাচনে ডুবেছিল নৌকা। জনপ্রিয় প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান হয়েছিলেন ধরাশায়ী। এতে চোখ খোলে কেন্দ্রীয় নেতাদের। সিলেটে দ্বন্দ্বের কারণেই নৌকার পরাজয়; এমনটি নিশ্চিত হওয়ার পর আমূল পরিবর্তন করা হয় সিলেট আওয়ামী লীগকে। বিশেষ করে মহানগরে দুটি পদেই আনা হয় পরিবর্তন। জেলার শীর্ষ নেতা মাসুক উদ্দিন আহমদকে এনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। আর জাকির হোসেনকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। ২০১৯ সালে গঠিত এ কমিটি দিয়ে এখন চলছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। বয়োবৃদ্ধ নেতা মাসুক উদ্দিন। তাকে সিলেট আওয়ামী লীগের সবাই একবাক্যে মানেন।

সাত-পাঁচে নেই মাসুক। নিজেকে জঞ্জালমুক্ত রাখেন সব সময়। বিতর্কিতও নন তিনি। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। নানা জায়গায় ঝামেলা। দলাদলির আভাস। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। নিজের কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের প্রতি অসন্তুষ্টও। গত এক মাস এগারো দিনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ ওয়ার্ড কমিটি গঠন হয়েছে। এই ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে গিয়ে নানা বাধা। অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে। এর মূলে সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। সর্বশেষ জাকির হোসেন তার নিজ ওয়ার্ডে হয়েছেন বিতর্কিত।

 ওয়ার্ড সম্মেলনে ঘোষণা করে বসেন নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম। এ নিয়ে ক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত মঞ্চ ভাঙচুরসহ সম্মেলন ও কাউন্সিল পণ্ড হয়ে যায়। এ নিয়ে গতকাল থেকে জাকিরকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক। সোমবার রাত ৮টায় সিলেট মহানগরের ১৮নং ওয়ার্ডের সম্মেলন শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। আর প্রধান বক্তা ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় রাত ১০টায়। নগরের মিরাবাজার আগপাড়ার কো-অপারেটিভ মাঠে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সভাপতি ও সম্পাদক পদে কারা প্রার্থী তাদের নাম সংগ্রহ করা হয়। এ সময় সভাপতি পদে ৪ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৫ জন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। তবে একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে প্রার্থীরা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি। এ কারণে ভোটগ্রহণের পক্ষে মতামত দেন বেশির ভাগ নেতা। পরবর্তীতে ভোটকে পাশ কাটিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এ সময় শীর্ষ দুই পদসহ তিন পদে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল ইসলাম আলকাছ প্রার্থিতা ঘোষণা না করলেও জাকির হোসেন তাকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে সম্মেলনস্থল থেকে চলে যান জাকির হোসেন। আর নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে কমিটি স্থগিত করে আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন। ভাঙচুরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ৩ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় জাকিরের ওপর চরম ক্ষুব্ধ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, ‘দলীয় সভানেত্রী সিলেট মহানগরে দলকে সংগঠিত করতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অনেক কিছু এড়িয়ে গেছি। এখন আর পারছি না। সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন ওয়ার্ডে পছন্দের প্রার্থীকে নিজের ক্ষমতা বলে দায়িত্বে দিতে চান। অথচ নেতাকর্মীরা সেটি মানছেন না। আমি চেষ্টা করছি স্বাভাবিক রাখতে। কিন্তু একা তো আর সব করা সম্ভব নয়।’ 

এদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সকল প্রার্থীরা আমাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা যা সিদ্ধান্ত নেবো তারা মেনে নেবে। আমরাও কমিটি ঘোষণা করেছি। কমিটি স্থগিত করা হয়েছে এমন তথ্য উত্থাপন করলে তিনি বলেন- ‘এ তথ্য আমার কাছে নেই। যে কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে তারাই নেতৃত্বে এসেছে। কাউন্সিলরদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে মহানগরে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।’ এদিকে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নিজের মতো করে মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলন ও কাউন্সিলর করছেন। তিনি কারও মতামতকে প্রাধান্য দিচ্ছেন না। একতরফাভাবে সব করার কারণে এরইমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাস খানেক আগে নগরের ২৫নং ওয়ার্ডে সম্মেলন করতে গিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে করে উপস্থিত থাকা নেতাকর্মীরা বিব্রত। এছাড়া, ওয়ার্ডের দায়িত্বে যেসব সাংগঠনিক টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে তাদেরও যথাযথ মর্যাদা বা মুল্যায়ন করা হচ্ছে না। এ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অনেক নেতা তার উপর ক্ষুব্ধ। তারা জানিয়েছেন, সামগ্রিক বিষয় নিয়ে যেহেতু বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সে কারণে এখনই মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা করা উচিত। এরপর বাকি থাকা ওয়ার্ডে সম্মেলন ও কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু করা উচিত বলে জানান তারা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn