সিলেট :: সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত শিমু হত্যার ঘটনায় মামলার আসামি মদন মোহন কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী মেরাজ। শিমুর মামা তারেক আহমদ লস্কর ৮ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৬/৭ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। গত রাতে মামলাটি দায়ের হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শিমু হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন কাজী মেরাজ।

পাঠকদের জন্য কাজী মেরাজের স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হচ্ছে-

‘‘প্রিয় মরহুম আবুল হাসনাত শিমু আমাদের সকলের খুবই প্রিয়ভাজন ছিলো। তার সাথে কারো কোন খারাপ সম্পর্ক ছিল না আমাদের জানা মতে। কিন্তু তারপরও তাকে এই নোংরা রাজনীতির কবলে পড়তে হলো, এটা ভাবতেই বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোন ভাবেই আমরা সহ সচেতন সিলেটবাসী মেনে নিতে পারছি না। আমরা জানি তার পরিবারকে শান্ত¦না দেবার মত কোন ভাষা নেই। আমরা হয়তো কিছুদিন মনে রাখবো কোন স্বার্থের জন্য, নোংরা কোন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। কিন্তু তার পরিবার কি করে এই যন্ত্রণা, এই শোক কাঠিয়ে উঠবে। যেমন নোংরা রাজনীতি করে শিমুর লাশ নিয়ে কিছু মানুষ তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য তার পরিবারের সদস্যদেরকে আমাদের কারো কারোকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমি সহ সিনিয়র ৪/৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করানো হয়েছে। শুধুমাত্র তার প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য এবং নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য দিবালোকের মত পরিষ্কার সিসি ক্যামেরাবেষ্টিত একটি জায়গায় ঘটনায় কে বা কারা জড়িত সেটা যে বের হবে আজ হোক বা কাল। সে কথাটাও ভুলে গিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ইমোশনালি এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল করে মামলাকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে। সকল সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ও আমাদের সকলের দাবী বা কথা ছিল শিমুর খুনে যে বা যারা জড়িত শুধু তাদেরকে চিহ্নিত করে মামলা দেওয়া হোক। কিন্তু কিছু মানুষ এই সুযোগে অন্যান্য কিছু মানুষকে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেদে শিমু হত্যা মামলায় জড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে কোন তথ্যপ্রমাণ না দেখে এবং মিছিলে উপস্থিত সকল বিবেকমান মানুষের যুক্তিসংগত কোন কথা না শুনে তারা শিমুর লাশ নিয়ে অপরাজনীতি করছে। তারা এত আগ্রহী হয়ে আসল অপরাধীদের বাদ দিয়ে আমরা যারা কোন ভাবেই এটার সাথে জড়িত নয়, এমন কয়েকজনকে মামলায় জড়াতে এত বেশী উঠে পড়ে লাগার পিছনে নিশ্চয় কোন প্রশ্ন থাকতে পারে? বিষয়টা শিমুর পরিবারের দায়িত্বশীল মানুষদের একটু ভেবে দেখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রিয় ভাই শিমুর আব্বা, আম্মা, তার স্ত্রী ও তার তারেক মামা আপনাদেরকে বিনীতভাবে কিছু অনুরোধ করছি। জানি আপনাদের কষ্ট, বেদনা কোন ভাবেই মুছার নয়। আমরা আপনাদের শিমুকে আর কোন দিন ফিরিয়ে এনে আপনাদের কাছে দিতে পারবো না। কি ভাষায় শান্ত¦না দেবো, শুধু মিথ্যে আশ্বাস মিথ্যে শান্ত¦না ছাড়া আর কিছুই দেবার নেই। তবু আমরা অন্তত আপনাদের মত একটা বিষয় চাই যে প্রকৃত অপরাধীদের সঠিক বিচারের মাধ্যমে শিমুর আত্মার শান্তি হোক, আপনারাও যেনো অন্তত বিচার হয়েছে আসল অপরাধীদের এ বিষয়টা জেনে কিছুটা হলেও মনকে শান্তনা দিতে পারেন। আমি এ ব্যপারে আপনাদের সাথে থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করতে চাই। এতে যদি আমি বা আমাদের সিনিয়র যে কয়জনকে আসামী করা হয়েছে, তাদেরকে পুলিশ খুঁজে ধরতে হবে না, আমরা নিজে আসবো আপনার সামনে। আপনি দয়া করে এই কাজটুটু করেন তারেক মামা। কষ্ট করে সকল তথ্য প্রমাণ, সিসি ফুটেজ অথবা যাদের কাছে ব্যক্তিগত ভিডিও ফুটেজ আছে এগুলো নিয়ে সাথে প্রশাসন নিয়ে প্রতিটা জিনিস আপনি আপনার মন, চোখ ও বিবেক দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখবেন, যে বা যারা আমাদের কথা বলেছে যা কিছু তার সুই পরিমাণও যদি আপনার চোখ আপনার বিবেকে প্রতিয়মান হয় তাহলে ওখান থেকেই সাথে সাথে আমাদেরকে প্রশাসনের হাতে দিয়ে দিবেন মামা। আর কোন সাক্ষীও আমি অন্তত চাইবোনা। যতদ্রুত পারেন আমাদের বিচার করিয়ে নিবেন যাতে কিছুটা হলে আপনাদের আত্মা শান্তি পাবে।

আমার ব্যক্তিগতভাবে শিমুর পরিবারের কারো সাথে খুব একটা পরিচয় নাই। বছর দেড়েক আগে যখন শিমুসহ আমরা অনেকই এক সাথে জেলে ছিলাম, তখন শিমুকে শুধু বিভিন্নভাবে হয়রানি করার জন্য কিছু স্বার্থপর মানুষ তার বিরুদ্বে বিভিন্ন মামলা দিয়ে তাকে তার ফ্যামেলি ও সমাজে নষ্ট করতে চেয়েছিল। তখন তো আজকের মত কোন শুভাকাঙ্খী তার কোন উপকারে এগিয়ে আসে নাই। বরং কিভাবে শিমুকে একের পর এক মামলা দিয়ে নষ্ট করা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো আজকের এই স্বার্থপররা। আমার এই কথার সত্যতা পেতেন যদি আজ শিমু বেঁচে থাকতো। আর তখন শিমু তার স্ত্রীকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার একটি মামলা বাদীর সাথে যোগাযোগ করে শেষ করে দিতে আমাকে বলেছিল। তখন আমি জেল থেকে বের হয়ে তার এই মামলা শেষ করে দিয়েছিলাম যা তার স্ত্রী (আমার বোনের) জানা। কথাটা এ জন্য বললাম আমি শিমুকে কতটুকু আপন ভেবে তার জন্য কি করছি সেটা হয়তো আমার এ ছোট বোনের জানা আছে মামা। নিজ গ্রুপের জুনিয়রদের মারামারি ফিরাতে গিয়ে আমাদের প্রিয় শিমু ন্যক্করজনক হত্যার শিকার হলো। শিমু মিছিলের অনেক আগে মোটর সাইকেলে ছিলো। মারামারিটাও মিছিলের লাইনের অনেক আগে হয়েছে। গ্রুপের সকল সিনিয়র ও আমাদের সকলই চেয়েছিল শিমুর লাশ নিয়ে যেনো অপরাজনীতি না হয়। কিন্তু কিছু স্বার্থপররা শেষ পর্যন্ত প্রিয় শিমুর প্রকৃত অপরধীদের আড়াল করতে নোংরা অপরাজনীতি করলো। একদিন আল্লাহতায়ালা এই স্বার্থপরদের মুখোশ উন্মোচিত করবেন তার পরিবারের মানুষের কাছে ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে প্রিয় শিমুর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। আল্লাতায়ালা তাকে জান্নাতবসী করুন। আমিন।’’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn