বার্তা ডেক্সঃঃসুনামগঞ্জের তিন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান পৌর মেয়র নাদের বখ্ত। ছাতক পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, ছাতক পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী। এছাড়াও জগন্নাথপুর পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন জগন্নাথপুর পৌরসভায় বর্তমান মেয়র মিজানুর রশিদ ভুইয়া।
শুক্রবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে ৬১টি পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের এসব পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা।
বৈঠকে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। বৈঠক শেষে রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগামী ১৬ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের তিন পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করবেন ২০ ডিসেম্বর। ২২ ডিসেম্বর যাচাই এবং প্রত্যাহার ২৯ ডিসেম্বর।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখ্ত জললুল মৃত্যুবরণ করায় ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জ পৌরসভার উপ-নির্বাচনে প্রয়াতের ছোট ভাই নাদের বখ্ত জয় হন। তিনি পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৩৫২ ভোট। তাঁর নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান গণিউল সালাদীন পেয়েছেন ৯ হাজার ৪৮৫ ভোট। বিএনপির প্রার্থী দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ৮০৭ ভোট।
ছাতকে ২০০৫, ২০১১ এবং ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী বিজয়ী হন। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে ২০০৫ সালে পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মাহফুজ শিপলু এবং আব্দুল ওয়াহিদ মজনুকে পরাজিত নির্বাচিত হয়েছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী। ২০১১ সালে ২য় বারের মতো পৌর মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এসময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন যুবলীগ নেতা সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকন। ২০১৫ সালে নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হন আবুল কালাম চৌধুরী।
এদিকে জগন্নাথপুরে গত ১১ জানুয়ারি পৌরসভার মেয়র আবদুল মনাফ মৃত্যুবরণ করলে পৌরসভার উপ-নির্বাচন ঘোষণা হয়। তফসিল অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারি মনোয়নপত্র দাখিল করে ভোটযুদ্ধে নামেন চার প্রার্থী। এই চার প্রার্থীর ৩ জনেই যুক্তরাজ্য থেকে এসে মনোয়ন জমা দিয়েছিলেন। ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের দিন সামনে রেখে প্রচারণা শুরু করেছিলেন প্রার্থীরা। প্রচারণার শেষ পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতির কারণে ২১ মার্চ ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। প্রবাসী প্রার্থীদের কেউ কেউ পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। প্রায় সাড়ে ৬ মাস পর গত ১০ অক্টোবর পৌরসভার ভোটগ্রহণ হয়। জগন্নাথপুর পৌরসভার উপনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রশিদ ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রর্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবুল হোসেন সেলিম কে পরাজিত করে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তিন পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী ১২ প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ১১ ডিসেম্বর বিকালে এই তালিকা কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। সুনামগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা নাদের বখ্ত, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর দাসের নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়েছিল।
ছাতক পৌরসভায় বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ মজনু ও যুবলীগ নেতা সুমন চৌধুরী এবং জগন্নাথপুর পৌরসভায় বর্তমান মেয়র মিজানুর রশিদ ভুইয়া, জেলা পরিষদ সদস্য মাহতাবুল হাসান সমুজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা আকমল খাঁন, জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী লুৎফুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীরেন্দ্র সুত্রধর ও আওয়ামী লীগ নেতা জব্বার মিয়ার নাম জমা দেওয়া হয়েছিল।

যারা মনোনয়ন পেলেন:

৬১ পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দিনাজপুর জেলার দিনাজপুর পৌরসভায় রাশেদ পারভেজ, বিরামপুরে আক্কাস আলী ও বীরগঞ্জে নূর ইসলাম, নীলফামারীর সৈয়দপুরে রাফিকা আকতার জাহান, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ফরহাদ হোসেন ধলু, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আবদুল্লাহ আল মামুন ও গাইবান্ধা পৌরসভায় শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর, বগুড়ার শেরপুরে আবদুস সাত্তার, সারিয়াকান্দিতে আলমগীর শাহী, সান্তাহারে আশরাফুল ইসলাম (মন্টু), নওগাঁর নজিপুরে রেজাউল কবির চৌধুরী, রাজশাহীর কাকনহাটে একেএম আতাউর রহমান খান, ভবানীগঞ্জে আ. মালেক ও আড়ানীতে শহীদুজ্জামান, নাটোরের নলডাঙ্গায় মনিরুজ্জামান মনির, গোপালপুরে কাজী আসিয়া জয়নুল ও গুরুদাসপুরে শাহনেওয়াজ আলী, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় সৈয়দ আবদুর রউফ মুক্তা, উল্লাপাড়ায় এসএম নজরুল ইসলাম, বেলকুচিতে আশানুর বিশ্বাস, রায়গঞ্জে আবদুল্লাহ আল পাঠান ও কাজীপুরে আবদুল হান্নান তালুকদার, পাবনার ঈশ্বরদীতে ইছহাক আলি মালিথা, ফরিদপুরে খন্দকার মো. কামরুজ্জামান (মাজেদ), সাঁথিয়ায় মাহবুবুল আলম, ভাঙ্গুড়ায় গোলাম হাসনাইন ও সুজানগরে রেজাউল করিম, মেহেরপুরের গাংনীতে আহম্মেদ আলী, কুষ্টিয়া জেলার কুষ্টিয়া পৌরসভায় আনোয়ার আলী, কুমারখালীতে সামছুজ্জামান অরুন, ভেড়ামারায় শামিমুল ইসলাম ছানা ও মিরপুরে মোহা. এনামুল হক, ঝিনাইদহের শৈলকূপায় কাজী আশরাফুল আজম, বাগেরহাটের মোংলাপোর্টে শেখ আব্দুর রহমান, মাগুরা জেলার মাগুরা পৌরসভায় খুরশীদ হায়দার টুটুল, পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর পৌরসভায় হাবিবুর রহমান মালেক, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে খন্দকার মনজুরুল ইসলাম (তপন), কিশোরগঞ্জ জেলার কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় পারভেজ মিয়া ও কুলিয়ারচরে সৈয়দ হাসান সারওয়ার মহসিন, ঢাকার সাভারে হাজি আবদুল গনি, নরসিংদীর মনোহরদীতে মোহাম্মদ আমিনুর রশিদ, নারায়ণগঞ্জের তারাবতে হাছিনা গাজী, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সেলিম রেজা, শরীয়তপুর জেলার শরীয়তপুর পৌরসভায় পারভেজ রহমান, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বিল্লাল হোসেন সরকার ও ফুলবাড়িয়ায় গোলাম কিবরিয়া, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে লতিফুর রহমান রতন ও কেন্দুয়ায় আসাদুল হক ভূঞা, সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জ পৌরসভায় নাদের বখত, ছাতকে আবুল কালাম চৌধুরী ও জগন্নাথপুরে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে জুয়েল আহমেদ ও কুলাউড়ায় সিপার উদ্দিন আহমদ, হবিগঞ্জের মাধবপুরে শ্রীধাম দাশ গুপ্ত ও নবীগঞ্জে গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী, কুমিল্লার চান্দিনায় শওকত হোসেন ভূঁইয়া, ফেনীর দাগনভূঞায় ওমর ফারুক খান, নোয়াখালীর বসুরহাটে আবদুল কাদের, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে মোক্তাদের মাওলা সেলিম, খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভায় নির্মলেন্দু চৌধুরী এবং বান্দরবানের লামা পৌরসভায় জহিরুল ইসলাম।

তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহ কাল থেকে:

তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৬৪টি পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। রোববার থেকে আগামী ২৪ ডিসেম্বর প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে।

শুক্রবার দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, সংশ্নিষ্ট জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত রেজুলেশনে প্রস্তাবিত প্রার্থীরাই শুধু মনোনয়ন ফরম কিনতে পারবেন। যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে এবং কোনো ধরনের লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় প্রার্থীকে অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে। গত ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।-সূত্র সুনামগঞ্জের খবর

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn