শহীদনূর আহমেদ :: চলতি আমন মৌসুমে ভালো ফলনের আশা করা হলেও উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। বছরের এই সময়টাতে এসেও মণ প্রতি ধানের দাম যেখানে সাড়ে ৬শ টাকা, সেখানে নতুন ধান উঠা শুরু হলে মূল্য আরো পড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  ফলন ভাল হবে জেনেও লোকসান গুনার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। ফলে কৃষকের পাশাপাশি এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ধান-চালের ব্যবসাসহ জেলার প্রায় ৫ শতাধিক চালকলের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে ব্যাপকহারে ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়ে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন আমনচাষীরা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার ৭৬ হাজার ২৪৪ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে ৮১ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় আমন ধান। আবাদকৃত ধানের মধ্যে ৬৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর উফসি জাতের ও ১৬ হাজার ৮৭২ হেক্টর স্থানীয় জাতের। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণের পর থেকে বন্যা না হওয়ায় এবং নিয়মিত বিরতিতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলায় আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাম্পার ফলন হবে। হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ মেট্রিক টন হারে এবার জেলায় দুই লাখ ৮৪ হাজার ৮৫৪ মেট্রিক টন আমন ধানের চাল উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, সব মিলিয়ে এবার জেলায় আমনের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছি আমরা। ইতোমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে পুরোমাত্রায় কাটা শুরু হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তবে বিদেশি জাতের কিছু ধানে চিটা ধরেছে, তবে সেটা মোট উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলবে না।

সরেজমিন আমনপ্রধান দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে হৃষ্টপুষ্ট শীষ গজিয়েছে আবাদ করা ধানক্ষেতে। মাঝে মাঝে আধাপাকা ধানক্ষেত হলুদাভ রঙ ধারণ করেছে। যে দিকে চোখ যায়, সেদিকে দেখা যায় সবুজ-হলুদের মিশেলে ছেয়ে গেছে ধানের মাঠ। অগ্রহায়ণের পূর্বেই অর্থাৎ কার্তিকের শেষ সপ্তাহে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করে দেবেন কৃষক। সেই লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে গৃহস্থ পরিবারগুলো। কাঞ্চনপুর গ্রামের কৃষক মখলিছ আলী বলেন, মাঠে তো ধান ভাল হয়েছে। তবে চারা বোনা, চাষ, ধান রোপণ, সার ও কীটনাশক বাবদ যে খরচ হয়েছে এবং সর্বশেষ ধান কাটতে গিয়ে যে খরচ হবে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে সেই খরচ উঠবে কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ ধানের বাজার একেবারে নি¤œমুখী। এই পরিস্থিতিতে কৃষকের চাহিদামাফিক সরকারের কাছে ধান বিক্রির সুযোগ করে দিতে হবে। তবে জেলার অনেক স্থানেই বিনা-১৭ জাতের ধান কাটা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এদিকে, জেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, আমন মৌসুমে জেলা থেকে কী পরিমাণ ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হবে সেই নির্দেশনা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো আসেনি। তবে গত আমন মৌসুমে জেলায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় করেছিল সরকার।হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, বোরো মৌসুমেও ধানের ন্যায্য মূল্য না থাকায় কৃষকরা লোকসান গুনেছেন। এবার একই দশায় পতিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন আমনচাষীরাও। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে ব্যাপক হারে ধান-চাল ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়ে কৃষকদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ১৭ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন ধান থেকে এবং মিলারদের কাছে থেকে ৩১ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন চাল সরকারিভাবে ক্রয় করা হয়। গত বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn