সুনামগঞ্জ  : সুনামগঞ্জে ৩৫ টি মামলায় বিচারাধীন ৪৯ জন শিশুকে সংশোধনের জন্য কারাগারের পরিবর্তে বই উপহার দিয়ে বাবা-মায়ের কাছে পাঠানোর ব্যতীক্রমী আরও একটি রায় দিয়েছেন সুনামগঞ্জ শিশু আদালতের বিচারক।  বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায়  সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই রায় দেন।

রায়ের পর আদালতের বিচারকের পক্ষ থেকে শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। এর আগে আরো ১৪ জন শিশুকে সংশোধনের জন্য প্রবেশনে মুক্তি দিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি।  সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নান্টু রায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মুক্তি পাওয়ার পর আদালতের দেওয়া শর্ত প্রতিপালন করবেন বলে জানায় শিশুরা।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দায়ের করা ৩৫ টি মামলায় ৪৯ জন শিশুর বিরুদ্ধে দÐবিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। ক্ষুদ্র একটি অভিযোগে এসব শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হত। ফলে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা মধ্যে পড়ে শিক্ষাজীবন ব্যবত হয়। স্বাভাবিক জীবনে বেড়ে উঠা হুমকির মধ্যে পড়ে। ওই ৪৯ জন শিশুকে দীর্ঘমেয়াদী ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে  সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন আদালত। তাদেরকে সংশোধনের জন্য ১০টি শর্ত  দিয়ে ওইসব শিশুদের কারাগারের পরিবর্তে পরিবারের হাতে তুলে দেন।

সংশোধনের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, একশত মনীষীর জীবনী নামক গ্রস্থ পাঠ, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, ২০ টি  গাছ লাগানো, মাদক থেকে দূরে থাকা, ভবিষ্যতে কোনপ্রকার অপরাধের সাথে নিজেকে না জড়ানো ইত্যাদি। এদিকে, মুক্তি পাওয়ার পরবর্তী এক বছর সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে  থাকবে।

সুনামগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান বলেন, আদালত নিদের্শনা মোতাবেক ওইসব শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে তাদেরকে যথাযথ তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে। আদালত থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো যাতে তারা প্রতিপালন করে সেই বিষয়গুলো মনিটরিং করা হবে।

সুনামগঞ্জ জজ আদালতের আইনজীবী আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, অনেক সময় কোনও কারণ ছাড়াই শিশুদের মামলায় জড়ানো হয়। আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটা ব্যতীক্রমী। ফলে যে কোনও মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে শিশুদের বিষয়টি আরো গভীরভাবে তদন্ত করে দেখবেন তদন্তকারীর কর্মকর্তা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn