সুনামগঞ্জের হাওড়ে বাঁধ ব্যবস্থাপনায় প্রকৃত কৃষক-মৎসজীবীদের স্বার্থ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবি জানিয়েছে পানি অধিকার নামে একটি বেসরকারি সংস্থার জোট। সরেজমিনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ এলাকায় তথ্যানুসন্ধান শেষে জেলা প্রশাসক, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে এ দাবি জানান পানি আধিকার ফোরামভুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।গত রোববার (১৩ জুন) সরেজমিনে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দেখার হাওর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিরামপুরের বিভিন্ন বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-র বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা, ফিল্ড অফিসার আল আমিন সরদার, নাগরিক উদ্যোগের কর্মসূচি কর্মকর্তা মো. মাহবুব আক্তার, নিজেরা করি-র কর্মসূচি সংগঠক মিজানুর রহমান ও এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)-র কর্মসূচি কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট রুলি ইসলাম ও এ. কে. এম. বুলবুল আহমেদ।
এ সময় তারা স্থানীয় কৃষক, জেলে ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে তাদের সাথে ছিলেন হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও হাওড় এরিয়া আপলিফমেন্ট সোসাইটি (হাউস)-এর নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধান শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সোমবার (১৪ জুন) সকালে সুনামগঞ্জ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটি-র নেতৃবৃন্দের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
মতবিনিময়ে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধসংক্রান্ত অনিয়ম, মানুষের দুর্ভোগ এবং এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনায় অংশ নেন হাওর বাঁচাও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সহ সভাপতি সুকেন্দু সেন, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য্যসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। দুপুরে প্রতিনিধিদল (জেলা কমিটির নাম)-এর সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান-এর সাথে সাক্ষাৎ করে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ সম্পর্কে তার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন।তিনি বলেন, এ বছর ৮১০ টি পিআইসির মাধ্যমে ৬২৩ কিলোমিটার বাঁধ পুণনির্মাণ ও মেরামতের কাজ মাত্র ৪ মাসে সম্পন্ন করতে হয়েছে।
তারপরও কাজের মান মূল্যায়ন করে আমরা বিল পরিশোধ করেছি, কাজের মান সন্তোষজনক না হলে বাঁধের ক্ষেত্রে আমরা নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করিনি। বন্যায় ফসলহানি রোধকল্পে বাঁধসহ অন্যান্য বিষয়ে সমন্বিত পরিকল্পনার বিকল্প নেই। হাওরের বন্যার পানি যাতে দ্রুত নিস্কাশিত হয়ে যেতে পারে এ জন্য নদী বা খাল খনন করতে হবে, তাদের পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। নদী ও খাল রক্ষায় জনগণকে সচেতন হতে হবে।মঙ্গলবার সকালে প্রতিনিধিদল সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন-এর সাথে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে তার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে সন্তোষজনকভাবে বাঁধ পুণনির্মাণ ও মেরামতের কাজটি সম্পন্ন করা গেছে। লোকবল ও সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে পুরো কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিবীক্ষণ করা সম্ভব না হলেও এ বিষয়ে কোনো অনিয়মের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এসময় প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ স্থানীয় জনগণ ও নাগরিক সমাজের দাবি অনুযায়ী সরেজমিনে চাহিদা নিরূপণ ও সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা ও বরাদ্দপ্রদান, অপ্রয়োজনীয় বাঁধসহ হাওড়ের পানি প্রবাহ বিঘ্নকারি সকল অবকাঠামো অপসারণ ও নদী-বিল খনন, অনিয়মের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, পিআইসি ব্যবস্থা কার্যকর করা এবং সর্বক্ষেত্রে হাওরের প্রকৃত কৃষক-জেলেদের অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিতের অনুরোধ করেন।প্রতিনিধিদলের সদস্য বেলা’র সিলেট বিভাগীয় অফিসের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ্ সাহেদা জানান, স্থানীয় মানুষ ও নাগরিক সমাজের দাবি হলো পিআইসি-কে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
হাওড়ের ওপর বর্ধিত পানির চাপ কমানোর জন্য নদী, খাল ও বিলগুলোকে নিয়মিত খনন করতে হবে। এ বিষয়গুলোই মূলত আমরা সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও বাপাউবো’র নির্বাহী পরিচালকের সামনে তুলে ধরেছি।এএলআরডি’র কর্মসূচি কর্মকর্তা (আইন) অ্যাডভোকেট রুলি ইসলাম বলেন, তথ্যানুসন্ধানে আমাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হলো যে, বাঁধ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে হাওরের প্রকৃত কৃষক ও জেলেদের সম্পৃক্ত করা হয় না। ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ রক্ষায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ, পুণনির্মাণ ও মেরামতের ফলে হাড়রের অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn