আল-হেলাল : সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দূর করতে বেরীবাঁধ কেটে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২১ জুন সোমবার সকালে ইউনিয়নের অক্ষয়নগর গ্রামের সামনে ধোপাজান নদীর পূর্বপাড়ের পিআইসি প্রকল্পের আওতায় নির্মিত অপরিকল্পিত অপ্রয়োজনীয় বাঁধের অংশ কেটে দিয়ে গত চৈত্র মাস থেকে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার পানি বের হওয়ার পথ সুগম করে দেওয়া হয়। বাঁধ কেটে দেয়ার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এস.ও) মোঃ আশরাফ হোসেন,সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আমির হোসেন রেজা,ইউপি সদস্য আনসার আলী,সাবেক মেম্বার আলাউর রহমান,ইদ্রিছ আলী,হাজী সাজুল মিয়া,হানিফ মিয়া,জসীম উদ্দিন,বাদশাহ মিয়া ও শফিকুর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। 

জানা যায়,গত ১৪ জুন বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়,সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত চৈত্র মাস থেকেই অক্ষয়নগর,মুসলিমপুর ও পশ্চিম হুরারকান্দা গ্রামবাসী এ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে না হলেও মানব সৃষ্ট এ দুর্যোগের  সৃষ্টি করা হয়েছে জেনেও এ ব্যাপারে কোন প্রতিকার নিচ্ছেনা প্রশাসন। সরজমিনে গেলে মুসলিমপুর গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়া ও মোঃ আল আমিন বলেন,আমাদের এলাকায় অধিকাংশ জমিই ৩ ফসলি জমি। এখানে বোরো ফসলের চাষাবাদ তেমন হয়না। তারপরও নিজেদের পকেটভারী করার লক্ষ্যে একজন অতি লোভী জনপ্রতিনিধি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদেরকে আগাম ঘুষ দিয়ে প্রতিভূ লোকজনের নামে পাউবোর কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ভোতিক পিআইসি ভাগিয়ে নেন। ফলে অপ্রয়োজনীয় বাঁধের কারণে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি হাওর থেকে নদীতে বের হতে না পারায় বাঁধের কারণে পানি হাওরে আটক থেকে যায় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে লেগে থাকা জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের ৩ ফসলি জমিতে আমরা তরি তরকারী ও আউশ আমন ধান উৎপাদন করতে পারছিনা। অক্ষয়নগর গ্রামের গোচর,মুসলিমপুর সড়কের পশ্চিম পার্শ্বের ৫ শত কেদার জমি ও হুরারকান্দা গ্রামের শাকসবজি ও ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই জলাবদ্ধতায়।

অক্ষয়নগর গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন,অক্ষয়নগর গ্রামের সামনে ধোপাজান চলতি নদীর পাড়ে বালাকান্দা বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের বালি পাথরের অফিসঘর এর সামনে থেকে হুরারকান্দা গ্রাম পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পিআইসি প্রকল্প নিয়ে গত বারের ন্যায় এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে এবারও অপ্রয়োজনীয় ভৌতিক পিআইসি প্রকল্প ভাগিয়ে নেয়া হয়। এসব প্রকল্পের আওতায় নদীর পাড়ে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাধ নির্মাণের ফলে গতবারও এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ নদীর পাড়ের জনবসতিগুলো ৪ বার বন্যা প্লাবিত হয়। গতবারের ন্যায় এবারও আমাদেরকে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার মুখে ঠেলে দিয়ে পাউবোর কর্মকর্তা ও দুর্নীতিবাজ পিআইসিরা পাহাড়ি ঢল,বন্যা ও জলাবদ্ধতার পানির ত্রিমুখি চাপে চরম সর্বনাশের আয়োজনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা জরুরি ভিত্তিতে জসিম উদ্দিনের বালি পাথরের অফিস ঘরের সম্মুখে বাঁধের মুখ কেটে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন,বাঁধের মুখ কেটে জলাবদ্ধতার পানি ধোপাজান নদীতে নেমে যাওয়ার রাস্তা সুগম করে দিলে মানুষ ও প্রকৃতি মারাত্মকভাবে উপকৃত হবে।

সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আমির হোসেন রেজা বলেন,অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে হুরারকান্দা,মুসলিমপুর,অক্ষয়নগর এ ৩টি গ্রামে শত শত একর ৩ ফসলি জমি পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত বাঁধ কেটে না দিলে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়ে জনবসতি ও গবাদিপশু মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। গবাদিপশুর খাদ্য এবং তরি তরকারিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আর উৎপাদন করা সম্ভব হবেনা। বিশেষ করে ৮০% শাকসবজী এসব জমি থেকেই উৎপন্ন হয়। এই জলাবদ্ধতার কারণে ইতিমধ্যে আউশ ফসলও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আমি জরুরি ভিত্তিতে তথাকথিত বেরীবাঁধের মুখ কেটে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রশাসন এখানে কোন কারণে ব্যর্থ হলে জনস্বার্থে আমি স্বউদ্যোগী হয়ে এলাকাবাসীকে নিয়ে কথিত বাঁধ কেটে দেবো।

উপরোক্ত বর্ণনায় এ সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি গত ২০ জুন রবিবার সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা এলাকাবাসীর স্বার্থে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ারের কার্যালয়ে গিয়ে বিতর্কিত বাঁধটি কেটে দেয়ার জন্য একটি লিখিত আবেদন করেন। বাঁধ কেটে দেয়ার জন্য নির্বাহী অফিসারকে অনুরোধ জানান,বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মিয়া,আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাহান,সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহ আলম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবেদন বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাউবোর এসও মোঃ আশরাফ হোসেন কে লিখিত আদেশ দেন। তৎপ্রেক্ষিতে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবেদনকারী আমির হোসেন রেজার নেতৃত্বে বাঁধ কেটে দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করে পাউবো। এসময় এলাকার প্রায় ২ শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।    

 

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn