শ্রমিক সংকটের মধ্য দিয়েও হাওরাঞ্চলে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটা। চলতি সপ্তাহে সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ভারী বর্ষণের আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন  বোর্ড ও কৃষি বিভাগ। হাওরের পাকা বোরো ধান দ্রুত কাটার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাউবোর সতর্কতায় উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী দুইদিন সুনামগঞ্জ জেলায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জে প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়ে হাওরের পাকা ধান তলিয়ে যেতে পারে। সতর্কবার্তা জারি করে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো। সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে-বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আগামী ২ মে বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন মেঘালয় এবং আসাম এলাকায় ভারি ও মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, শেরপুরসহ কয়েকটি জেলায় আগাম বন্যাঝুঁকিতে পড়তে পারে। এসময় হাওর অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বন্যাও হতে পারে। সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যেতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে হাওরের পাকা ধান কাটার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে কৃষকরা জানিয়েছেন হাওরের বোরো ফসল পেকে গেলেও শ্রমিকের অভাবে তারা হাওরের পাকা ধান কাটতে পারছে না। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন জেলার অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের হাওরে ধান কাটার জন্য লিখিত আহ্বান জানিয়েছে। এই আহ্বানের কপি স্থানীয় উপজেলা পরিষদ  চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ বিভাগও একই দাবি জানিয়েছে জেলার ভিন্ন পেশার শ্রমিকদের। এদিকে রোববার সকালে হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিষ য়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আগাম বন্যা ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহযোগিতা বিষয়ক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী একে মনজুর হাসান। এছাড়াও মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রসেসিং এন্ড ফ্লাড ফোরকাস্টিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুল হোসেন, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নুরুজজামান, অতিরিক্ত জেলা প্রাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সফিউল আলম, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (১) আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী (২) খুশি মোহন সরকার, সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার সাহাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ জানান, আগামী তিন দিন সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নদীর পানি বৃদ্ধি ও আগাম বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই হাওরের সকল বোরো পাকা ধান কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশল রঞ্জন কুমার দাস বলেন,‘ আগামী ২ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন মেঘালয় ও আসামে ভারি ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। এতে কিছু নদ নদীর পানি বিপদসীমার উপরে ওঠে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আমরা কৃষকদেরকে দ্রুত হাওরের পাকা ধান কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়েছি। ধান কাটার তাগিদ দিয়ে বিভিন্ন হাওরে উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করেছেন। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার সাহা বলেন,‘ ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাওরের প্রায় ৭০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হওয়ার আশংকা রয়েছে, তাই পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলার অনুরোধ করা হয়েছে।’ সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন,‘ আগামী দুই-তিন দিন সুনামগঞ্জসহ আশপাশের হাওর অঞ্চলে ২৫ থেকে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে পাশ্ববর্তী ভারতের আসাম ও মেঘালয় এলাকায় ১৪০ থেকে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত এবং নদীর পানি বৃদ্ধি হতে পারে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn