হাওর অঞ্চলের বর্ষা আসলেই নৌকা ছাড়া চলাচলের বিকল্প কোনো বাহন নেই। বছরের ৬ থেকে ৭ মাসই ঘরবাড়ির চারপাশ পানিতে ডুবে থাকায় মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন এই নৌকা। তাই এসময় বেড়ে যায় নৌকার কদর।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দুর্গম হাওর এলাকার মানুষ তখন নৌকা কেনেন নৌকার হাটে এসে। অনেকে আবার পুরনো নৌকা বিক্রি করেন। বর্ষার মৌসুমে নৌকা বিক্রির এই পেশাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। উপজেলার দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের মাটিয়ান হাওরের পাড়ে কাউকান্দি বাজারে প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার নৌকা বিক্রিয় হাট বসে আষাঢ়ের শুরুতেই নৌকার এই হাট বসে সকাল থেকে চলে বিকেল পর্যন্ত। প্রতি বছরের মত এবারও বসেছে নৌকার হাট। ইতোমধ্যে বেড়েছে বিকিকিনিও। এছাড়াও জেলার তাহিরপুর, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, ছাতক, সুনামগঞ্জ সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বাজারে বসে নৌকার হাট।

জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ২৪৯টি গ্রামের লোকজন বর্ষা মৌসুমে হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন গ্রামে ও উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া আবার অনেকে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয় তাই নৌকা কেনেন। হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের বিপুল পরিমাণ চাহিদা থেকে কাউকান্দি বাজারে দীর্ঘদিন ধরে জমে ওঠেছে নৌকার হাট।

এবাজারে ডিঙ্গি, কুশি থেকে শুরু করে বড় আকারের সরুই বালিটানা সব ধরনের নৌকা নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এছাড়া প্রতিবছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইজারা চুক্তির মাধ্যমে এই হাটে নৌকা বিক্রি করতে নিয়ে আসা হয়। এ হাটটি সরকারের আয়েরও একটি উৎস। নৌকার হাটের স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, হাওরবেষ্টিত এ উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে ঘর থেকে বের হলেই প্রয়োজন হয় নৌকার। স্থানীয় নৌকার কারিগররা নৌকা তৈরি করে বিক্রি করায় গত এক যুগ ধরে পরিচিত পেয়েছে কাউকান্দি বাজারটি। তাই কিনতে ছুটে আসছেন নৌকার এই হাটে হাওর পাড়ের বাসিন্দারাই। বেচাকেনাও জমজমাট।

মাটিয়ার হাওর পাড়ের জেলে সাজিবুর রহমান জানান, এই সময়ে উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত,মাছ ধরা,গরুর খাবার সংগ্রহ করাসহ বাড়ি থেকে বেরুলেই হাওর অঞ্চলের মানুষের চলাচলের প্রাণ এই নৌকাই। আমার একটি পুরনো নৌকা ছিল সেটি বিক্রি করে এই বাজার থেকে মাছ ধরার জন্য একটি নৌকা কিনেছি। নৌকা ক্রেতা রুহুল আমিন ও ইসলাম উদ্দিন বলেন, নৌকা বিক্রি হাট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে কাউকান্দি বাজারটি। এখানে পছন্দ মত নৌকা কিনেছি আর দাম মোটামোটি ভালই।

শফিক মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, এখানে বিভিন্ন সাইজের ও বিভিন্ন দামের নৌকা প্রতিদিন বেচাকেনা হয়। এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নৌকা কিনতে আসে। নৌকা বিক্রেতা আরিফুল মিয়া বলেন, আমি প্রতি বছর এই বাজারে সপ্তাহে দু-দিন নৌকা বিক্রয় করে সংসার খরচ চালাই। জিসিন পত্রের দাম বেশী তারপরও নৌকা বিক্রি করে লাভ ভালই হয়। তিনি বলেন, সবচেয়ে ছোট নতুন একটি ডিঙ্গি নৌকার দাম সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা থেকে একেকটা নৌকা ১২-১৩হাজার টাকার বিক্রি হয়। বালিটানা নৌকার দাম সর্বোচ্চ ১৫থেকে ২৫-৩০হাজার টাকা পর্যন্ত।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn