স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আগামী ১০ই আগস্ট কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডগুলোর নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হেফাজত আমীর আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর একটি বিবৃতির কারণে সেই প্রোগ্রামে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের  শীর্ষ নেতারা। একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই  প্রোগ্রাম স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উপ-সচিব শামীম হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণবশত সেই প্রোগ্রাম  স্থগিত করার বিষয় জানানো হয়। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গত ২৫শে জুন হেফাজতের কেন্দ্রীয়  নায়েবে আমীর  মাওলানা মিজানুর  রহমান চৌধুরী ‘কওমি ধারার দ্বীনি শিক্ষা ও শিক্ষকের মানোন্নয়নকল্পে সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি কওমির মাদ্রাসার মানোন্নয়নে ৮টি দাবি করেন। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ঠা আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কওমি মাদ্রাসার বোর্ড প্রধানদের একটি বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি আসার দুদিন পর ৬ই আগস্ট শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সেই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে একটা বিবৃতি দেন। চিঠিতে  মাওলানা  মিজানুর রহমান চৌধুরীর সেই চিঠির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়। 

হেফাজত আমীর মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহাম্মাদ ইয়াহহিয়া, মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের এই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কওমি ধারার দ্বীনি শিক্ষা ও শিক্ষকদের মান উন্নয়নকল্পে সদয় দৃষ্টি কামনা’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে লিখিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর একটি চিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি হেফাজতের পক্ষ থেকে লিখিত কোন চিঠি নয়। মিজানুর রহমান চৌধুরী সেই চিঠির বিষয়টি হেফাজতের কোন ফোরামে আলোচনা করে তিনি প্রেরণ করেননি। এটি একান্তই তার ব্যক্তিগত। এই গণমাধ্যমের বরাতে বিষয়টি জানতে পেরেছে হেফাজত নেতৃবৃন্দ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নায়েবে আমীর মিজানুর রহমান চৌধুরীর চিঠি ও তার বিপরীতে দলের আমীরসহ ৩ শীর্ষ নেতার বিবৃতি নিয়ে কওমি অঙ্গনে সৃষ্টি হয় তোলপাড়। একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে অপারগতা জানায় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত কর্তৃপক্ষ আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআ’তিল কওমিয়া বাংলাদেশ। এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে আগামী ১০ অগিস্টের বৈঠক স্থগিত করেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক  সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস মানবজমিনকে বলেন, কওমি বোর্ডগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাবেন না শুনেছি। তবে সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কি সিদ্ধান্ত এসেছে তা আমি ঠিক জানি না। আর সেটা কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের বিষয়। সরাসরি হেফাজতের না।

মাওলানা মিজানুর রহমান ইস্যুতে হেফাজতে কোন বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চলে তিনি বলেন, এখানে বিভক্তির বিষয় আসবে কেন। মাওলানা মিজানুর রহমান হেফাজতের পদবী ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। মোহতারাম আমীর, মহাসচিব তাই বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন সেটা একান্ত তাঁর (মিজানুর রহমান) বিষয়। এই চিঠির সাথে হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn