বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। দলের শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মানিকের সামনে এখন জয়ের হ্যাটট্রিকের সুযোগ। ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ করে দলীয় মনোনয়ন লাভে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আয়ুব করম আলী, দোয়ারাবাজার আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ আহমদ তারেক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী। এদিকে স্থানীয় বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ চাইছে। তিনটি ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচিত তিনবার সংসদ সদস্য হন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সহযোগিতায় জাসদের প্রার্থী হিসেবে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।২০০১ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে হারিয়ে সংসদে যান মিলন। এবার দলীয় মনোনয়ন লাভে তার শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান।

আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মানিকের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে যে তিনজন মাঠে রয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রচারে এগিয়ে শামীম আহমদ চৌধুরী। মানিকের দলীয় প্রতিপক্ষ ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী হচ্ছেন শামীম চৌধুরীর ভাই। নির্বাচনে শামীম এ সুুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। তবে এর আগে ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোটে লড়াই করে শামীম চৌধুরী বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরীর কাছে হেরে যান। সার্বিক দিক বিবেচনায় ছাতক-দোয়ারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আস্থা রাখতে চান বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের ওপরই। তবে মানিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে নিজ দলের ভেতরে-ই।আসন্ন নির্বাচন ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে এমপি মানিক দুই উপজেলায় দু’হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের তথ্য দিয়ে যুগান্তরকে বলেন, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পোন্নয়ন, বিদ্যুতায়ন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী শামীম আহমদ চৌধুরীর দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে মানিক দাবি করেন, তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের একসময়ের ঘাঁটি এ আসনে ১০টি নির্বাচনের মধ্যে চারবার বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তিনবার স্বতন্ত্র, দুইবার জাতীয় পার্টি ও একবার করে জয় পায় বিএনপি ও জাসদ। স্বাধীনতা-পরবর্তী এ আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আবদুস সামাদ আজাদ একবার, এএইচএম আবদুল হাই, কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও মুহিবুর রহমান মানিক তিনবার করে এবং অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ একবার এমপি নির্বাচিত হন।জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। বিভিন্ন আড্ডায় চলছে এ নিয়ে আলোচনা। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সভা-সমাবেশ, মতবিনিময়, উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। দর্শনীয় স্থান প্রার্থীদের বিলবোর্ড, ছবিসংবলিত নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তিও দীর্ঘদিনের। দুই যুগ ধরে দুই নেতাকে ঘিরে দুটি বলয় গড়ে উঠেছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংসদ সদস্য মানিক ও অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী। বিভক্তি রয়েছে বিএনপিতেও। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনকে ঘিরে একটি বলয় কাজ করছে। অপর অংশের কেন্দ্রে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সাবেক ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান। দুই দলই এ আসনে পৃথকভাবে জাতীয়, স্থানীয় ও দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছে। দলীয় কোন্দলের মাশুল বিএনপিকে দিতে হয়েছে গত উপজেলা নির্বাচনেও। ছাতক ও দোয়ারাবাজার- দুই উপজেলাতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস ছাড়া অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব নেই। জাতীয়ভাবে জোটগত নির্বাচন হলেও এ আসনে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে। দলীয় টিকিট পাওয়ার দৌড়ে যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন সুনামগঞ্জ জেলা জাপার সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, কেন্দ্রীয় জাপার নির্বাহী সদস্য ও সাবেক জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওহিদ কনা মিয়া, সিলেট মহানগর জাপার যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক ছাতক উপজেলা সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী আবুল হাসান, উপজেলা সভাপতি আবুল লেইছ মো. কাহার, যুক্তরাজ্য জাপা নেতা রুহুল আমিন, কেন্দ্রীয় জাপার নির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া রয়েছেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন ও জামায়াত নেতা গোবিন্দনগর ফজলিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুস সালাম আল-মাদানী।এদিকে একের পর এক হামলা-মামলায় কাবু ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী বিশেষ করে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী হয় নিষ্ক্রিয়, নয়তো আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে চলে গেছেন বিদেশে।জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এলাকার উন্নয়নের করুণ দশার চিত্র তুলে ধরে যুগান্তরকে বলেন, উন্নয়নের নামে তারা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিটি রাস্ত পরিণত হয়েছে মিনিপুকুরে। তারা রাস্তা তৈরি করা তো দূরের কথা, বিএনপি আমলের তৈরি রাস্তাগুলোও মেরামত করতে পারেনি।বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে দলের কোন্দল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এখন ছাতক-দোয়ারায় কোনো কোন্দল নেই।
বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান, তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে তিনি দলকে সুসংগঠিত করে যাচ্ছেন। তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। এদিকে খেলাফত মজলিসের মাওলানা সফিক উদ্দিন বলেন, দু’উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে তিনি দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও মানবসেবা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে ছাতক-দোয়ারা আসনটি খেলাফত মজলিসকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির নেতা আবদুল মজিদ জানান, ছাতক-দোয়ারার আসন জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য মহাজোট নেতাদের কাছে দাবি করেন তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn