চলমান মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গত ১০ দিনে পুলিশ-র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক নিহত হয়েছেন। পুলিশ-র‍্যাবের পক্ষ থেকে তাদেরকে মাদকব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করা হয়েছে। তারিখওয়ারি নিহতদের মধ্যে রয়েছে ১৫ মে ২ জন; ১৭ মে ৩ জন; ১৮ মে ১ জন; ১৯ মে ৩ জন; ২০ মে ৪ জন; ২১ মে ৯ জন; ২২ মে ১২ জন; ২৩ মে ৮ জন, এবং ২৪ মে ১০ জন। বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে কুমিল্লা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার ও মাগুরায় ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় নিহত হন তারা। এ নিয়ে ১৫ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২।  চলমান অভিযানে গতকাল পর্যন্ত অন্তত আড়াই হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে আইন শৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। গত ৪ মে থেকে র‌্যাব দেশজুড়ে মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরু করে। পুলিশ ও র‌্যাবের সূত্র বলছে, অভিযান জোরদারের পর গত ১৫ মে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। একদিন বাদে ১৭ মে নিহত হয় আরও দুই মাদক ব্যবসায়ী। পরের দিন তিনজন ও ২০ মে নিহত হয় ছয় মাদক ব্যবসায়ী। ২১ মে সারাদেশে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নয় মাদক ব্যবসায়ী। পরের দিন বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২। একদিনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ এখন পর্যন্ত নিহতের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এ ছাড়া গত ২৩ মে নিহত হয় আটজন। এদিকে, বুধবার থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬৮ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। কারওয়ান বাজার এলাকায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২২ মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেন।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে দুই মাদক ব্যবসায়ী। বুধবার রাত ১টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন আমানগণ্ডা সলাকান্দা নতুন রাস্তার মাথায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবুল ওরফে লম্বা বাবুল (৩৫) নিহত হয়। একই রাতে সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারাসংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন ট্যাঙ্ক রোডের গোয়ালমথন এলাকায় নিহত হয় রাজীব (২৬) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী। উভয় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও মাদক। নিহত বাবুল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বৈদ্দেরখিল গ্রামের হাফেজ আহাম্মদের ছেলে এবং রাজীব সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ীসংলগ্ন চাঙ্গিনী গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দু’জনই মাদক ব্যবসায়ী।

ফেনী: ফুলগাজীতে বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মনির হোসেন ও শাহ মিরান শামীম নামের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছে, শামীম ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল। শামীমের মা আনোয়ারা বেগম দাবি করেছেন, বুধবার দুপুরে পুলিশ এসে শামীমকে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ দুই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় রাতে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মনিরের বোন রেজিনা বেগম। তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে বুধবার রাতে ফেনী শহরের বড় মসজিদ এলাকা থেকে তার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

মাগুরা : মাগুরা শহরতলির পারনান্দুয়ারী হাউজিং প্রজেক্ট এলাকা থেকে বুধবার গভীর রাতে আইয়ুব শেখ ও মিজানুর রহমান কালু নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতদের পরিবারের দাবি, দু’দিন আগে পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। মাগুরার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ছয়েরউদ্দিন জানান, মাদক ব্যবসা নিয়ে আন্তঃদলীয় কোন্দলে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে ওই দু’জন নিহত হতে পারে। আইয়ুব শেখের নামে হত্যা ও মাদক আইনে ২১টি এবং কালুর বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে। নিহত আইয়ুব শেখের ছেলে আশিকুর রহমান বলেন, ২২ মে রাতে পুলিশ পরিচয়ে তার বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। প্রায় একই তথ্য দেন নিহত কালুর স্ত্রী নার্সিন আক্তার কাজল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আমির খাঁ নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও রয়েছে। বুধবার রাত ২টার দিকে উপেজলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ স্টিল ব্রিজসংলগ্ন পাকা রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আমির খাঁ উপজেলার চানপুর এলাকার সুরুজ খাঁর ছেলে। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ ১২টি মামলা রয়েছে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে আবদুল আজিজ নামের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের হিজলা চণ্ডীপুর গ্রামের সিদ্ধেরপুকুরে লাশটি পাওয়া পায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও ৪৮ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।

কক্সবাজার : কক্সবাজারের কলাতলী এলাকা থেকে মোহাম্মদ হাসান নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে। হাসানের বাড়ি কলাতলীর আদর্শগ্রামে। তার বাবার নাম খুইল্যা মিয়া। কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন্দলের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। অবশ্য নিহতের স্ত্রী আমেনা খাতুন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে সাদা পোশাকে তিন ব্যক্তি বাসা থেকে তার স্বামীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সেলিম (৩২) নামের সন্দেহভাজন এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে দক্ষিণ নিমাইকাশারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, স্থানীরা সেলিমকে ‘ফেনসি সেলিম’ হিসেবে চেনে। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn