চেক ডিজঅনার মামলায় দুই বছর ধরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন প্রয়াত তাজিন আহমেদের মা দিলারা জলি। আর সেই মাকে অর্থের অভাবে নিয়মিত দেখতে যেতে পারতেন না এক সময়কার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। তাজিনের ‍মৃত্যুর পর এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ তথ্য জানান নির্মাতা মাহাদী হাসান সোমেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে জানান,পাঁচশ টাকার অভাবে মায়ের জন্য খাবার কিনেও পাঠাতে পারতেন না তাজিন। সোমেন তার স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘তাজিন আহমেদ। গত ৩টা বছর ধরে কি অমানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছি তা অব্যক্ত। আজ কত কত মানুষ ঐ মৃত মুখটা দেখতে আসছেন, কিন্তু জীবিত অবস্থায় যদি একবারের জন্যও এই মানুষগুলো পাশে দাঁড়াতো তাহলে অন্তত এভাবে নীরবে চলে যেতে হত না। পরপর ২টা চাকরি চলে গেল, কেউ ঐভাবে কাজেও ডাকতো না, মাঝে মাঝে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার জন্য কত জনের কাছে হাত পেতেছেন, এই আমি তার সাক্ষী। ৫০০ টাকা হলে মায়ের জন্য কারাগারে খাবার পাঠানো যায়, সেই টাকাটাও থাকত না মাঝে মাঝে এই আমি তার সাক্ষী। আমাকে পাঠানো সর্বশেষ মেসেজ এখন কী করবা? আমি বুঝে উঠতে পারিনি। যেতে যেতেই অভিমানে বিদায়…’ অন্যদিকে নির্মাতা অনিমেষ অাইচও তার একটি স্ট্যাটাসে তাজিনের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরেন। অনিমেষ আইচ লিখেন, ‘মরে গেলেই আহা…উহু! বেঁচে থাকতে কেউ পুছে না। ঈদ নাটক মানেই সব টাকা দিয়ে একটা মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান, অপূর্ব এবং স্টার কাস্ট কিনতে হবে। মরে গিয়ে বেঁচে গেলেন তাজিন। একজন শিল্পির অপমৃত্যুর জন্য আমরাই দায়ী। সামনে অকালমৃত্যুর দীর্ঘ সারি।’ তাজিনের কাছের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর দুয়েক ধরে অর্থনৈতিকভাবে খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিলেন তিনি। না ছিল চাকরি, না ছিল শুটিং। ধারণা করা হচ্ছে আর্থিক সঙ্কট, জেলবন্দী মা, স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব, হাতে কাজ না থাকা ইস্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তাজিন।

২২ মে, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের রিজেন্ট হাসপাতালে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তাজিন। এরপর থেকেই এই অভিনেত্রীর জীবনের অর্থনৈতিক টানাপড়নের বিষয়টি তার আশপাশে থাকা পরিচিত মানুষের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন পোস্টে প্রকাশ পায়। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে চিরতরে চলে গেলেন অমলিন হাসিমাখা অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। নব্বই দশকের টেলিভিশন নাটকগুলোতে দাপিয়ে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১০ সালের পর থেকে টেলিভিশনে নাটকে তার উপস্থিতি অনেকখানি কমতে শুরু করে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn