সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : বহুদিন পর নিজের জন্মস্থানে সংবর্ধনা ও সম্মাননায় অভিষিক্ত হলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি,বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান। ২৩ অক্টোবর শনিবার বিকেলে দিরাই উপজেলা সদরে বিশাল সম্প্রীতি সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকরা ছাড়াও এলাকার বিশ্ববরেণ্য পার্লামেন্টেরিয়ান অকাল প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপির অনুসারী তৃণমূল পর্যায়ের হাজার হাজার মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিসিক্ত হয়েছেন তিনি।

সম্প্রীতি সমাবেশটি শেষ পর্যন্ত বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপির দেশ ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে আওয়ামীলীগের ঐক্যের মজবুত ভিত্তিকে আকড়ে ধরতে। ক্ষমতাধর অনুপ্রবেশকারীদের রোষানলে পড়ে জেল জুলুম হামলা মামলা ও হুলিয়ায় অতিষ্ট আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মতিউর মানিক জয়াসেন ও ব্যারিস্টার ইমনের আন্তরিক ঐক্যে অভিভূত হয়ে প্রকাশ্যে সমবেত হয়ে মানবতার কাতারে দাড়িয়ে তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। সকাল থেকে দিনব্যাপী দিরাই উপজেলার প্রতিটি গ্রাম থেকে মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরে সমবেত হন তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

শারীরিক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে আমেরিকা ফেরত ঐ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে কাছে পেয়ে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষ যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। শনিবার সকালে জেলা সদর থেকে দিরাই থানা সদরে যাত্রাপথে সুনামগঞ্জ ৩ আসনের মদনপুর,নোয়াখালি বাজার,গনিগঞ্জ ও পাথারিয়া বাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত হন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

শনিবার বিকেল ৩ টার দিকে থানা পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান মতিউর রহমান বলেন,একাত্তরে যারা বাঙ্গালী জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তারাই আজ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করতে চাইছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে উন্নয়ন হচ্ছে,মানুষ ভালভাবে চলতে পারছে, আরাম আয়েশে থাকছে, আজ দেশে কোন অভাব নেই, শেখ হাসিনার দক্ষতা নিয়ে সারা বিশ্বে দেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম ধর্মের কোন মানুষ কারো উপর হামলা করতে পারে না।

প্রধান বক্তা হিসেবে ছাতক-দোয়ারার এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উর্বর ভুমি হচ্ছে দিরাই-শাল্লা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে একটি মহল তৎপর হয়ে উঠছে, তারা রাজনৈতিক সম্প্রীতি নষ্ঠ করতে এবং আওয়ামীলীগের অগ্রযাত্রাকে দমিয়ে রাখতে বারবার অপচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী, যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে সম্মান করেনি তারা দিরাইয়ে শোক সভার নামে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে উল্লাস করে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, যারা আওয়ামীলীগের সুবিধা নিয়ে বটগাছ হয়েছে,তারা কালো টাকা দিয়ে সারা সুনামগঞ্জ জেলায় সংগঠিত আওয়ামীলীগকে বিচ্ছিন্ন করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত নেতাদের আওয়ামীলীগের দুর্দিনে খোঁজে পাওয়া যায়নি। যারা শান্তি কমিটির প্রিয়ভাজন, যারা জয়বাংলা শুনে অভ্যস্থ নয় যারা জিন্দাবাদ বলে তাদের জায়গা আওয়ামীলীগে হবেনা।

সম্প্রীতি সমাবেশ একপর্যায়ে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হয়ে উঠে। সকাল থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা আসতে দেখা যায় থানা সদরে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট সোহেল আহমেদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান এওর মিয়ার পরিচালনায় সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মতিউর রহমান।

প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার এনামুল কবির ইমন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলতাব উদ্দিন, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক হুমায়ুন রশিদ লাভলু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সিরাজ দৌলা তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট অভিরাম তালুকদার, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান সেন্টু, দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বিশ্ব, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট রিপা সিনহা।

বক্তব্য রাখেন পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া, উপজেলা ছাত্র লীগের সভাপতি পারভেজ রহমান সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ। মুহিবুর রহমান মানিক পরিকল্পনা মন্ত্রী কে ইঙ্গিত করে আরোও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে আপনি দিরাই আসবেন ভাল কথা কিন্তু আপনি তো আওয়ামী লীগ কে বাদ দিয়ে আসতে পারেন না। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগে আজ যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদের কে চিহ্নিত করা হবে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম, পরিবর্তন করে এখন শান্তিগঞ্জ নামকরণ করা হয়েছে, কারণ ওখানে তো শান্তি কমিটির অভয়রাজ্য ছিল। আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের আমলা ছিলেন, স্বাধীনতার অনেক পরে চাকরি ফিরে পেয়েছেন,আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কি বুঝবেন।

মতিউর রহমান বলেন, আমি ৬০ বছর যাবত আওয়ামী লীগ করে আসছি। আমি কোনদিন নীতি আদর্শ বদলাইনি। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে কখনো বেইমানী করিনি। বর্তমানেও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আজ একজন আমলা চাটুকারিতা করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপি মন্ত্রী হয়ে এখন অনেক বড় নেতা হয়ে গেছেন। এখন তিনি সরকারের উন্নয়নের নামে নিজ গ্রামে সব উন্নয়ন করতেছেন। উন্নয়নের নামে সুনামগঞ্জ জেলাকে উন্নয়ন বঞ্চিত করে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি আপনি আওয়ামীলীগের সরকারের মন্ত্রী হয়ে আপনি দিরাই আসছেন উন্নয়ন করতে ভালো কথা কিন্তু আওয়ামী লীগ কে বাদ দিয়ে তো আসতে পারেন না। দিরাই জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এলাকা এখানের মানুষ খুব সচেতন। এখানে কোন বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না। আপনি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কে বাদ দিয়ে কার স্বার্থে কাজ করছেন তা আমাদের জানা আছে।

আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি তুলে ধরবো। আগামীতে আপনি এমপিও হতে পারবেন না মন্ত্রীও হতে পারবেন না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন,সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আজকের এই বিশাল সম্প্রীতি সমাবেশ প্রমাণ করে অসাম্প্রদায়িক এই বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার স্থান নাই। এই সমাবেশ তার জলন্ত উদাহরণ। এদিকে ভার্চুয়েলি সংযুক্ত হয়ে সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেন দিরাই-শাল্লার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ড.জয়াসেন গুপ্তা এমপি। কিন্তু চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি কোন কথা বলতে পারেননি। তার পক্ষে সমবেত বিশাল জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট সোহেল আহমদ ছইল মিয়া ও উপস্থাপক এওর মিয়া বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমানের গণ সংবর্ধনা উপলক্ষ্যেই আজকের সম্প্রীতি সমাবেশ। সারাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ড.জয়াসেন গুপ্তা এমপি ও আলহাজ্ব মতিউর রহমানের নির্দেশনাতেই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই বিশাল সম্প্রীতি সমাবেশ সম্পন্ন করতে পেরেছি। সমাবেশে বক্তারা ড.জয়া সেন গুপ্তা এমপির সুস্থতা কামনা করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn