প্যারিস রোড দেখতে ফ্রান্সে নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুন
প্যারিস রোডের কথা উঠলেই সবারই মনে পড়ে যায় ফ্রান্সের প্যারিস রোডের কথা। প্রকাণ্ড রাস্তা, সারি সারি গাছ। তাই না! যদি বলি, বাংলাদেশেও প্যারিস রোড আছে! অবাক হলেন কী! হ্যাঁ, আছে। এই প্যারিস রোড দেখতে আপনাকে আসতে হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিহারের সবুজ চত্বরে। মতিহারের সবুজ চত্বরে বৃক্ষ-আচ্ছাদিত পিচঢালা একটি রাস্তার নাম ‘প্যারিস রোড’। প্যারিস রোড বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোরই একটি অংশ। গগনশিরীষ নামের সুউচ্চ গাছগুলো রাস্তার দু’ধারে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধারণা করা হয়, এই গাছগুলো ফ্রান্সের প্যারিস থেকে আনা হয়েছিলো। তাই রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে প্যারিস রোড। গগনশিরীষ নামের সুউচ্চ গাছ দিয়ে রোডের দু‘পাশ সজ্জিত বলে রাবি ক্যাম্পাসের প্যারিস রোড দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
জানা যায়, ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে ক্যাম্পাসের কাজলা রোড থেকে শের-ই-বাংলা হল পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে এই গগনশিরীষ গাছ লাগানো হয়। এই গাছগুলোকে বলা হয় রেইন ট্রি। রেইন ট্রি গাছগুলো বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। কথিত আছে, তৎকালীন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে সিলেট অঞ্চল থেকে গাছগুলো নিয়ে আসা হয়। আবার জানা যায়, তৎকালীন উপাচার্য এম শামসুল হক ফিলিপাইন থেকে এই গাছ নিয়ে আসেন। তবে যেখান থেকেই আনা হোক না কেনো রোডটি দেখতে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম অনেকটা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরের মত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর নাম ধরে ডাকেন প্যারিস রোড।
জনশ্রুতি আছে, একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের কিছু ছবি তুলে তার এক বন্ধুর কাছে পাঠায়। বন্ধু দেখে বিস্মিত হয়ে বলে এটি কোন দেশের ছবি। সেই শিক্ষার্থী তখন বলে দেয় এটা আমাদের ক্যাম্পাসের। তার মধ্যে অন্যতম ছিল প্যারিস রোডের ছবিটিও। এরকম আরো অনেক গল্প রয়েছে। টাংগাইল থেকে ঘুরতে আসা শিহাব আহমেদ বলেন, এই রোডটির কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু আগে কখনো দেখা হয়নি। আজ দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই এক অপরূপ সৌন্দর্যময় রাস্তা এবং এটি ভুলে থাকার মতো নয়। ঢাকা থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকা শহরে এরকম পরিবেশ পাওয়া যায় না। এখানকার প্রতিটি স্থাপনায় ভালো লেগেছে। তবে প্যারিস রোড সবার উপরে।
শুধু দর্শনার্থী নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ রোডটিকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। শরিফ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ফেসবুক চালাই এবং এর বেশিরভাগ ছবিই প্যারিস রোড থেকে তোলা। আমরা বন্ধুরা মিলে বিকেলের দিকেই বেশি আড্ডা দেই এখানে। তবে প্যারিস রোড আর আগের মতো নেই। প্রতিবছর ঝড়ে কিংবা প্রশাসনের বিভিন্ন অজুহাতে গাছ কাটায় প্যারিস রোড তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।