আলমগীর হোসেন।।

গাজীপুরের কাশিমপুর-১ কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ও খালাস চেয়ে রাষ্ট্র এবং আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে ৬ এপ্রিল। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার দণ্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে একমাত্র সাঈদীর সাজা নিয়ে রিভিউ আবেদন এখন শুনানির অপেক্ষায়। প্রায় পনের মাস আগে গত বছরের জানুয়ারি মাসে এই রিভিউ আবেদন দাখিল করেছিলেন উভয়পক্ষ। এদিকে সাঈদীর সাজার বিষয়ে রিভিউ আপিল কার্যতালিকায় আসায় সোমবার সবার দৃষ্টি ছিল সেদিকে। কি রায় আসছে সর্বোচ্চ আদালত থেকে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনকি গ্রহণ হচ্ছে না খারিজ হচ্ছে। যদিও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, রিভিউয়ের রায়ে সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে।অপরদিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে ও জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেছেন, তার বাবা খালাস পাবেন বলে আশা করছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় সাঈদীর অনুসারীরা। সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই ৭০ জন নিহত হন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারে অধিকাংশ সময় নামাজ-কালাম পড়ে সময় কাটছে সাঈদীর। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় বই পড়ছেন। পত্রিকা পড়ে ও টেলিভিশনের খবর দেখে দেশের চলমান পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সদস্যরা এসে তার সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেন। কারাগারের দেওয়া খাবার খেয়েই থাকছেন তিনি। কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারের দেওয়া খাবারই খাচ্ছেন তিনি। কারাগারের দেওয়া খাবারে তার কোনো অভিযোগ নেই। তাকে মাছ, গোশত, সবজি, ডাল, মোটা চালের ভাত সরবরাহ করা হয়।

সূত্রটি আরো জানায়, সাঈদী শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন, পরে ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ঘুম থেকে ওঠে কোরআন তেলাওয়াত করেন। কারাগারের দেওয়া খাবারই খান। এছাড়াও প্রিজন ক্যান্টিন থেকে পছন্দমত খাবার কিনেও খান। তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা ভালো। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। অন্য চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীদবাগের বাসা থেকে পুলিশ সাঈদীকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।

রিভিউতে দণ্ডাদেশ বৃদ্ধির নজির নেই: সাঈদীর আইনজীবী

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, রিভিউতে কখনো দণ্ডাদেশ বৃদ্ধি করা হয় না। এমন কোনো নজির বাংলাদেশে নেই।’সোমবার সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সাঈদীর এ মামলায় দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। একটিতে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে, অন্যদিকে আমরা খালাস চেয়েছি।’ তিনি বলেন, যেহেতু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এক্ষেত্রে আমরা সময়ের আবেদন করব। আশা করি আমরা সময় পাব। আদালত সেটি পর্যালোচনা করে যেটা সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এ মামলায় আদালতের যে ফাইন্ডিং দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে সাঈদী সরাসরি কোনো অভিযোগে সংযুক্ত ছিলেন না। সে কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই তার এ সাজা হয় না। সরকার পক্ষ থেকে যে রিভিউ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, যেহেতু অন্যান্য কেসে একই সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, এখানেও তেমনটি হওয়া কাম্য।তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, রিভিউতে কখনো দণ্ডাদেশ বৃদ্ধি করা হয় না। এমন কোনো নজির উপমহাদেশে আছে বলে আমার জানা নেই। সেটা যাই হোক, বিচারক সেটা বিচার করবেন।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn