আবু মকসুদের ফেসবুক থেকেঃঃ কবি কুতুব আফতাব। আমি চিনতাম, তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না তবু প্রাণের কাছাকাছি ছিলেন। লন্ডনের সাহিত্য আড্ডায় আমরা যখন রাজা-উজির মারি তিনি তখন সেন্ট আলবানস থেকে মুচকি হাসেন। আমরা নিজেদের বিলেতের মূলধারা ভাবি, মফশ্বলের কাউকে পাত্তা দেই না। দেমাগে মাটিতে পা পড়ে না, আমাদের সার্টিফিকেট ছাড়া বিলেতের কাগজগুলোতে কেউ লিখতে পারে না। আমাদের মর্জি হলে কেউ কবি হতে পারে, যতই প্রতিভাবান হউন আমাদের সাহায্য ছাড়া কবি স্বীকৃতি সম্ভব না। কুতুব আফতাব দূর মফস্বলে থাকেন, তিনি কবিতা লিখেন কিন্তু কবি খ্যাতির জন্য লালায়িত নন। তিনি গীতিকার, চমৎকার সব গান লিখেন, বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর গান শুনি আর ঈর্ষিত হই। আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে তার কবিতা পড়ি, আর নিজেদের অক্ষমতায় হাত কামড়াই। আমরা নিজেদের মূলধারা ভাবি, নিজেদের বিখ্যাত কবি ভাবি। কুতুব আফতাব এসব না ভেবেও আমাদের চেয়ে বেশি মূল ধারণ করেন, তিনি আমাদের চেয়ে বহুলাংশে খ্যাত কবি। তিনি কোনদিন মূল ধারার তোয়াক্কা করেননি, অথচ মূল যেচে তাঁর কাছে চলে যায়।

তার কবিতা পড়ে ঈর্ষিত হাত কামড়ানো ক্ষান্ত দিয়ে তাঁর অনুগামী হওয়ার খায়েশ প্রকাশ করি। তাঁর সাথে যোগাযোগ হলে মানুষ হিসাবে তার উচ্চতা অবলোকন করে পুনরায় লজ্জিত হই, তাঁর ব্যক্তিত্বের কাছে মিইয়ে যেতে থাকি। একদিন মেলায় তার সাথে দেখা হয়, কোলাকুলি শেষ হলে নিজেকে হালকা মনে হয় তাঁর স্পর্শে দেমাগ, গরিমা, মিথ্যা আত্মতৃপ্তি সব ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়। কুতুব আফতাব প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষে পরিণত হন। আমাদের বিভ্রান্ত কবিত্ব থেকে মাটিতে টেনে নামানোয় তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি আমাদের কবিতাকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন, কবিতার পিছনে লেগে থাকতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি বুঝিয়েছিলেন লেগে থাকলে কবিতা হবে, গলাবাজি কবিতা নয়। একাগ্রতা, সাধনা কবিতা। তাঁর সাথে মাঝে মধ্যে আলাপ হত, ফেসবুকে টুকটাক মন্তব্য বিনিময় হত। তাঁকে একজন অমায়িক ভালো মানুষ হিসাবে জানতাম, তাঁর ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছিল।

আমরা প্রায় সমবয়সী ছিলাম, তেমন কোনো কঠিন অসুখ তাঁর ছিল বলে শুনিনি। করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছিলাম সেরে উঠেছেন সেটাও জেনেছিলাম। কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরোপুরি বিমূঢ়, বিশ্বাস হচ্ছে না প্রিয় কবি কুতুব আফতাব নেই। তাঁর মতো শান্ত অমায়িক মানুষ জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি, আমাদের এতিম করে তিনি চলে গেলেন। তাঁর মাগফেরাতের জন্য আন্তরিক দোয়া চাচ্ছি। আল্লাহ প্রিয় কবিকে বেহেশতের বাগানের মালি বানান। আমিন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn