দুর্বল ক্যামেরা যতটুকু সম্ভব জুম করে থার্ড আম্পায়ার যে রায় দিলেন, তাতে আফগানদের নাগিন ড্যান্স চলমানই থাকল, হতভম্ব হয়ে থাকল বাংলাদেশের ডাগআউট! বাউন্ডারির সীমানা থেকে বলটি মাঠে ছুড়ে দেওয়ার সময় আফগান ফিল্ডার শফিকউল্লাহর পা শূন্যেই ছিল, সেকেন্ডেরও কয়েক ভগ্নাংশের কম সময়ের জন্য! হ্যাঁ, আর তাতেই টাইগারদের ভাগ্যে জোটে ১ রানে হারের যন্ত্রণা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রানের, শেষ বলে ৪। দুর্ভেদ্য রশিদ খানকে লংঅনে তুলেই মেরেছিলেন আরিফুল, ফিল্ডারের সামান্য অসতর্কতাতেও সেটা বাউন্ডারি হতে পারত; কিন্তু লড়াকু আফগানরা সিরিজের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গিয়েছিলেন। আর সে কারণেই বাংলাদেশকে তারা প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করতে পেরেছেন। তিন ম্যাচের সবক’টিতেই রশিদ খানের ভয় দেখিয়েই বাজিমাত করল আফগানরা! টাইগাররা নিজেরাও গুটিয়ে ছিল প্রথম দুই ম্যাচে, নিজেদের শক্তি আর সামর্থ্যের ওপর নিজেরাই যেন আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল তারা। তবে গতকাল কিন্তু কিছুটা লড়েছে টাইগাররা। বোলিংয়ের সময় প্রতিপক্ষকে ১৭টি অতিরিক্ত রান দেওয়া, ব্যাটিংয়ের সময় নবী- আফতাবের সহজ বলগুলোকে চার্জ না করা, সৌম্য-লিটনের রানআউটের মতো অনেক ভুল ছিল টাইগারদের। তার পরও প্রথম দুই ম্যাচের মতো লড়াই না করে হাল ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা ছিল না এদিন। আপাতত সান্ত্বনা বলতে এটুকুই!

ব্যাঙ্গালুরু থেকে দেরাদুন- ভারতের এ দুটি শহরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুটি ট্র্যাজেডি লেখা হয়ে থাকল। সেবার টি২০ বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের কাছে ১ রানে হারটি ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সমর্থকদের। এদিনও দেরাদুন সেই কষ্টটাই দিল। তবে এবারে ভুল ছিল সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই। দলের নামি-দামি তারকারা যেন ক্লান্ত ছিলেন, স্ট্রাইক রেট কারও টি২০ সুলভ ছিল না। সিনিয়দের এই হাল দেখে জুনিয়ররা ছিলেন বিভ্রান্ত। বারবার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে নিজেদের দুর্বলতাই ধরা পড়েছে আফগানদের সামনে। দুটি ম্যাচ আগেই হেরে যাওয়ার পর এদিনও তিনটি বদল নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন সাকিবরা। মোসাদ্দেকের বদলে মিরাজ, রুবেলের জায়গায় আবু জায়েদ রাহি আর সাব্বিরকে বিশ্রাম দিয়ে আরিফুল হক। বদলে অবশ্য কিছুটা কাজ হয়েও ছিল।

যদিও মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম ওভারেই দিয়ে ফেলেন ১৮ রান। এতে দুটি চার ও একটি ছয়ে শাহজাদ নেন ১৪ রান, বাকি চার ওয়াইডেই দিয়ে দেন মিরাজ। ডানহাতি এ অফস্পিনারকে দিয়ে পরে আর একটি ওভারই করাতে পেরেছেন সাকিব। যা মিলিয়ে দুই ওভারে তার খরচ ২৮ রান। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ১৪৫ রানে বেঁধে রাখা গিয়েছিল আফগানিস্তানকে। আজকালের টি২০ বাজারে এই রান তাড়া করা কঠিন কিছু নয়। হ্যাঁ, প্রতিপক্ষের ত্রাস রশিদ খানের চার ওভার ধরেই। কিন্তু তামিম এই রান তাড়া করতে নেমে এদিন ব্যর্থ হন। দিন দিন এই ফরম্যাটে তার দুর্বলতাগুলো চোখে পড়ছে ভীষণ। লিটন আর সৌম্য শুরুটা ভালো করলেও নিজেদেরই ভুলে রানআউট হন। এরপর সাকিবের কাছ থেকে দল ভালো একটি ইনিংস আশা করলেও আবারও হতাশ করেছেন তিনি। সেই তেড়েফুঁড়ে ক্যাচ আউট! ১০ রানে বিদায় সাকিবের। মুশফিক আর মাহমুদুল্লাহ এরপর ১৫ ওভার পর্যন্ত অতিসতর্ক ছিলেন, সহজ বলগুলোও কঠিন করে খেলছিলেন! মুশফিকের ২১ রান নেওয়া ওভারেই বদলে যায় দৃশ্যপট। কিন্তু কে জানত শেষ বলে লেখা থাকবে ১ রান কম হওয়ার চিত্রনাট্য।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn