রাজধানীতে উলটোপথে গাড়ি চালনার সমালোচনার সময়ে এবার একই ঘটনার জন্ম দিয়েছেন দুই সাংবাদিক নেতা। এনিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট তাদেরকে বাধা দিলে তারা উলটো ওই সার্জেন্টকে ধমক দিয়েছেন। এঘটনার এক ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার অফিসার্স ক্লাব থেকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং একই সংগঠনের মহাসচিব ওমর ফারুক প্রাইভেট কারে করে বেইলি রোড হয়ে উলটোপথে ফিরছিলেন। তাদের গাড়ি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে পৌঁছালে সেখানে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট আটকে দেন। কাওসার হামিদ নামের ওই সার্জেন্টের সঙ্গে এ সময় তাদের কথা কাটাকাটি হয়। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গাড়ি আটকে দেওয়ার পর মনজুরুল আহসান বুলবুল ও ওমর ফারুক দাঁড়িয়ে কথা বলছেন সার্জেন্ট কাওসার হামিদের সঙ্গে। এ সময় বুলবুল দাবি করেন, তিনি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে উলটোপথে প্রবেশ করেছেন, ওনার কাছে প্রমাণ রয়েছে। সার্জেন্ট গাড়ির কাগজপত্র চাইলে তিনি তা দিতে চাননি।
ওই ভিডিও’র কথোপকথন নিচে তুলে ধরা হলো-
মনজুরুল আহসান বুলবুল : আপনার অফিসার যখন অ্যালাও করছে, তখন আমরা আসছি। উই হেভ দ্য ডকুমেন্টস।
কাওসার হামিদ : আচ্ছা ডকুমেন্টস পরে দেখা যাবে।

মনজুরুল আহসান বুলবুল : আমরাও পরে দেখব আপনারটা। আপনারটা নিয়ে তো আইজিপির সঙ্গে কথা বলছি অলরেডি। উই উইল সি ইউ টুমরো। আমরা কালকে দেখব, আপনার দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা বলছি তো। এ সময় সার্জেন্ট কাউকে ফোন দিয়ে অবহিত করেন, উলটাপথে গাড়ি আসলে আটকানো হয়েছে এবং কাগজপত্র চাইলে দিচ্ছে না। মনজুরুল আহসান বুলবুল সার্জেন্টকে বলেন অফিসারকে ডাকার জন্য। বলেন, ‘আপনি আমাদেরকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যান।‘
কাওসার হামিদ : থানায় নিব না, আমি মামলা করব।
মনজুরুল আহসান বুলবুল : করেন না। মামলা করে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যান।
কাওসার হামিদ : কাগজ কই আপনার?
মনজুরুল আহসান বুলবুল : কাগজ দিব কেন? কাগজ দিচ্ছি না আপনাকে।
এ সময় তিনি আবার বলেন, আপনার অফিসার আমাদের অ্যালাও করেছে। আপনি শুরু থেকে উলটাপালটা আচরণ করছেন।
কাওসার হামিদ : আমি উলটাপালটা কিছু করিনি।
মনজুরুল আহসান বুলবুল : আপনি অনেক বাজে ব্যবহার করেছেন। শুনেন আপনাদের পুলিশ স্টাফ কলেজে আমি স্টুডেন্ট পড়াই।
কাওসার হামিদ : এজন্য আপনার আইন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা উচিত।
মনজুরুল আহসান বুলবুল : আপনি যে ব্যবহার করেছেন, সেটা তো ঠিক না। এনিয়ে মনজুরুল আহসান বুলবুল ফেসবুকেএক স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেন, ‘ভাইরাল হওয়া ছবিটি নিয়ে আমি বেশ খুশিই। পুলিশ বাহিনী তো আর খারাপ না, কিন্তু পুলিশের ইউনিফর্ম পরে, সিভিল মাস্তানকে নিয়ে, মানুষকে হয়রানি করে পুলিশের সম্মান যারা ধুলায় লুটায়, তার প্রতিবাদ তো করতেই হবে। খালি টকশোতে নীতিকথা বলবে আর রাজপথে চোখের সামনে অন্যায় হলে চুপ থাকবে তা তো হয় না। নামের পরিচিতি ছাড়া ইউনিফর্ম পরা পুলিশ আর তার ‘সিভিল কালেকটর’-এর ছবি এবং তাদের আচরণ রেকর্ড করা আছে। আছে দুই ভদ্র পুলিশেরও ছবি। পুলিশ চাইলে সব দিতে পারি, বিবরণও জানাতে পারি। যিনি ভাইরালটি ছড়িয়েছেন তাকে ধন্যবাদ, এ থেকে পুলিশের পোশাক পরা কারোর মাস্তানির প্রতিবাদ করার সাহস পেতে পারেন অনেকে।’সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন মনজুরুল আহসান বুলবুল।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও সম্পর্কে লিখেছেন সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক। তিনি লিখেন-

এই দেশে হ্যাডম দেখানোর জন্য নিয়ম কানুন ভাঙাকে একটা মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়। যে যত নিয়ম ভাঙতে পারে সে ততবড় ভিআইপি। ষোলকোটি মানুষের দেশে ষোললক্ষই কোনো না কোনোভাবে স্বঘোষিত ভিআইপি! এই অশিক্ষিত অসংস্কৃত লোকগুলোর মধ্যে নিজের তেজ দেখানোর একটা বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে রাস্তায় উল্টো দিক থেকে গাড়ি চালানো। বিশেষ করে সরকারি নেতা-পাতিনেতা, পেটি অফিসার আর মিডিয়ার অশিক্ষিত লোকগুলো এটাকে তাদের বিশেষ অধিকার মনে করে থাকে। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে সাংবাদিক নেতা বুলবুল ভাই বেইলি রোডে উল্টো লেনে যেতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা বাধা পেয়ে হম্বিতম্বি করছেন। তিনি তার গাড়ির কাগজপত্র মামলার জন্য দিতে চাচ্ছেন না। তিনি যুক্তি দিচ্ছেন যে রাস্তার মোড়ে এক অফিসার তাকে উল্টো লেনে আসতে দিয়েছে, সুতরাং তার কোনো অপরাধ নেই। দ্বিতীয় আরেকটি কথা বলছেন যে তাকে বাধা দেয়া পুলিশ অফিসারটি আদব কায়দা জানে না, বুলবুল ভাই পুলিশ স্টাফ কলেজে এসপিদেরকে (আদব কায়দার!) ট্রেনিং দেন। যিনি ট্রেনিং দেন তিনি নিজেই যদি আইন ভাঙেন তাহলে তাকে আবার ট্রেনিং দিতে ডাকা উচিত হবে না। তবে মজা পেয়েছি তার অদ্ভুত যুক্তিতে যে, যেহেতু রাস্তার মোড়ে অফিসার তাকে এদিকে যেতে বাধা দেয়নি তাই তার কোনো দোষ নাই! ভবিষ্যতে কোনো ছিনতাইকারি ধরলে সে যদি বলে বসে, রাস্তা দিয়ে আসার সময় কোনো পুলিশ তারে চেক করে নাই বলে সে ছুরি নিয়ে ছিনতাই করেছে-তার কোনো দোষ নাই, তাহলে বুলবুল ভাই ঐ ছিনতাইকারির পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবেন বলে আমার আশংকা।

আমি পুলিশের সেই লোকটি অভিবাদন জানাই যিনি এতো চাপের মুখেও বুলবুল ভাইয়ের গাড়ি ছাড়তে রাজি হননি। আমি সেই লোকটিকেও অভিবাদন জানাই যিনি ভিডিওটি করেছেন এবং বুলবুল ভাইয়ের ঝামটার মুখে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমি উৎসাহী জনতা!’ আসলে এই পথ-ঘাট, অফিস-আদালত সবই আমাদের মতো উৎসাহী জনতার। কোনো স্বঘোষিত ভিআইপিদের নয়। এই বোধ যত বেশি আমরা ছড়িয়ে দিতে পারব ততোই আমাদের সবার জন্য মঙ্গল। এদেরকে সামাজিক ভাবে লজ্জা দেয়া দরকার। এইসব স্বঘোষিত ভিআইপিরা নিজেদেরকে যতই হ্যাডমওয়ালা ভাবুক না কেন, আইনভাঙার কোনো অধিকার তাদের নেই। এম্বুলেন্স, ফায়ারব্রিগেড আর পুলিশের গাড়ি ছাড়া আর কাউকেই উল্টো লেনে যেতে দেয়া উচিত না। ফুলস্টপ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn