মুহাম্মদ আমিনুল হক—

শাফি ভাইয়ের কথা আজও কানে বাজে, আমিনুল লিখে যাও এক সময় ভাল লিখতে পারবা। তবে নিজেকে ভাল রেখ সব সময়। সাংবাদিকতা থেকে প্রেসক্লাব সকল ক্ষেত্রে শাফিভাইর অবস্থান ছিল স্পষ্ট। সুনামগঞ্জের সাংবাদিকদের সকল সুখে-দুঃখে তিনি ছিলেন। আমার দেখা, বিশ্বম্ভরপুরের এক সাংবাদিক একদিন পশ্চিমবাজারে কিছু লোকদের দ্বারা অপদস্ত হলে শাফি ভাই শোনা মাত্রই আমাকে বললেন, আমিনুল চল যাই, তিনি যাওয়া মাত্রই ধাওয়াকারীরা পালিয়ে যায়। তিনি সাথে সাথে ঐ সাংবাদিককে একটি পাঞ্জাবি কিনে দেন ও পুলিশে খবর দিয়ে ধাওয়াকারীদের ধরিয়ে উপযুক্ত বিচার করে দেন।
২০০৪ সাল আমার কিশোর বয়সের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শহরের অলিগলি সর্বত্র আমাদের পদচারণা। একদিকে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করানোর জন্য সিনিয়র ভাইরা ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু, মন কখনও সায় দেয়নি ছাত্র রাজনীতি করি। তবুও বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত সাংবাদিক সাকির ভাইয়ের খপ্পরে পড়ে ছাত্ররাজনীতিতে কিছুদিন সময় দিয়েছি। তখন থেকেই পৌর বিপণিতে আমাদের আনাগোনা। ঠিক সেই মুহূর্তে ্আমার নজর কারেন ‘প্রথম আলো ব্যুারো চিফ’ উজ্জল মেহেদী। আমাকে ডেকে বলেলন, আমাদের বন্ধু সভার বন্ধু হও তুমি। আমি উনার কথায় সায় দিয়ে বন্ধু হলাম। বুধবারের প্রথমআলো কিনে বন্ধু সভার সদস্য হলাম। তখন থেকেই বন্ধু সভার পাতায় ও সাথে সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ বার্তায় লেখা শুরু করি। হঠাৎ একদিন আমার একটি বড় আকারের লেখা ‘একুশ আমাদের গর্ব’ শিরোনামে সুনামগঞ্জ বার্তায় ছাপা হয়। পরের দিন পত্রিকাটি সংগ্রহ করতে ‘সুনামগঞ্জ বার্তা পত্রিকা অফিসে গেলে’ সম্পাদক শাফি ভাই আমাকে ডেকে কুশল বিনিময় করে আরো সুন্দর করে লেখালেখি করার জন্য টিপস দেন। আরো বলেলন, ছোট ছোট খবরও দিও। ঐ সময় উনার পাশে বসা ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক সাজু পুরকায়স্থ, গীতিকার মহসিন রাজা চৌধুরী। উনাদের সামনেই তিনি আমার লেখা ভালো হয়েছে বলে আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই ছোটখাট নিউজও হাতে লিখে দিতাম বার্তা সম্পাদক আল-হেলাল ভাইর কাছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হলে আনন্দ পেতাম। মৃত্যু অবধি প্রতি মুহূর্ত শাফি ভাই’র কাছ থেকে অনেক ভাল উপদেশ পেতাম আলাপের ফাঁকে। তিনি বলতেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিলে আমি প্রকাশ করবো। সে যেই হোক, ক্ষমতাধর ব্যক্তি। সত্যিই তিনি তার কথায় ও কাজে মিল রেখে গেছেন। সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলে গেছেন। তৎকালীন সময়ে সুনামগঞ্জের একটি ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিউজ করেছিলেন। সুনামগঞ্জের সর্বমহলে তিনি বাহবা পেয়েছিলেন। কিন্তু ঐ সম্প্রদায় তাদের এমপির ক্ষমতা দেখিয়ে তাকে পুরাতন বাসষ্টেশনে পথ আগলে ধরেছিল কিন্তু তিনি তার কলম থামাননি। আমরা ঐ সময় শাফির ভাইর পক্ষে প্রতিবাদ র‌্যালি করে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা সহকর্মীরা অনেক সময় বলতাম শাফি ভাইর সুনামগঞ্জ বার্তা সুনামগঞ্জের মানবজমিন। আজ আমরা আমাদের অভিভাবক শাফি ভাইকে হারালাম। যা কখনও পূরণ হবার নয়। মহান রাব্বুল আল-আমীন তাহাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমীন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn