দৃশ্যপট এক: ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম শিরোপা জিতেছিল ভারত। কপিল দেবের নেতৃত্বে লন্ডনের লর্ডসে ফাইনালে ভারত ৪৩ রানে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন মহিন্দার অমরনাথ।

দৃশ্যপট দুই: ২০১১ সালের ২ এপ্রিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলে নেয় ভারত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শচীন টেন্ডুলকার-মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা উৎসবে মেতেছিল। ফাইনালে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন অধিনায়ক ধোনি নিজেই।

দৃশ্যপট তিন: ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ত্রয়োদশ আসরের ফাইনাল। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শকের সামনে কে জিতবে শিরোপা? দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত নাকি পাঁচবারের ট্রফি জয়ী অস্ট্রেলিয়া?

মহাত্মা গান্ধীর শহরে আগে থেকেই সাজ সাজ রব। নীল উৎসবে সবাই মেতে উঠার অপেক্ষায়। এমন দিন যে কমই আসে। সেই ২০১১ সালে সবশেষ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ভারত। মুম্বাইয়ের ফাইনালটা স্মরণীয় করে রেখেছিল শচীন-ধোনিরা। এবার ১২ বছর পর তার পুনরাবৃত্তি দেখার অপেক্ষায় প্রায় একশ ৩৯ কোটি দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। যারা বলতে গেলে ক্রিকেটকে নিয়ে সবসময় স্বপ্ন দেখে, ক্রিকেটকে পুজা করে। অনেকটা ধর্মের মতো মনে করে! নিজেদের দেশে এমন সুযোগ নিশ্চয়ই রোহিত শর্মা কিংবা বিরাট কোহলিরা হাতছাড়া করতে চাইবেন না। আহমেদাবাদের এক লাখ ৩০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে নীল উৎসবের ঢেউ বয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় সবাই।

এটা তো শুধু ভারতের সমর্থকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা-প্রত্যাশার কথা বলা হচ্ছে। ফাইনালে ভারত এমন এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাঠে নামছে যাদের ইতিহাস-রেকর্ড বেশ সমৃদ্ধ। এখন পর্যন্ত ১২টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। এবার তাদের সামনে ‘হেক্সা মিশন’। ব্রাজিলের মতো পাঁচবারে এসে তাদের বিশ্বকাপ শিরোপা যাত্রা থমকে যাবে নাকি আরও একবার রেকর্ড হবে তা কালই পরিষ্কার হবে। ও আর একটি কথা বলে ফেলা ভালো। দৃশ্যপটে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে কিন্তু ভারতকে হারিয়ে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সুতরাং নীল ঢেউয়ে অজিদের উড়ে দেওয়া ততটা সহজ হবে না বলে মনে হচ্ছে।

তবে এবার ভারত অন্যবারের তুলনায় দারুণ খেলে চলেছে। শুরু থেকে দুর্দমনীয়। সামনে যেই পড়ছে তাদেরকে উড়িয়ে দিচ্ছে। সপাটে ব্যাট চালিয়ে ৪-৬ মেরে প্রতিপক্ষকে করছে নাস্তানাবুদ। লিগ পর্বে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে খেলেছে। লিগ পর্বে তো অজিদের ৬ উইকেটে হারানোর সুখস্মৃতি আছে। ধারাবাহিকতা ছিল নক আউট পর্বেও। এখন পর্যন্ত কোনও দলই সেভাবে স্বাগতিকদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। পরিপূর্ণ দল হিসেবে যা বোঝায় ভারতকে দেখলে পরিষ্কার তা ফুটে উঠবে। এক দিকে রোহিত-কোহলি-গিল-শ্রেয়াসদের ধুন্ধুমার ব্যাটিং, একের পর এক সেঞ্চুরি। অন্য দিকে মোহাম্মদ শামি-রবীন্দ্র জাদেজাদের দারুণ বোলিং। শামি তো সেমিফাইনালে ৭ উইকেট নিয়ে নিজের দেশে এখন হিরোর চেয়েও বেশি!

ভারত বন্দনা করলে অস্ট্রেলিয়ারটা কম যাবে কেন? শুরুর দুই ম্যাচ হেরে অজিরা ব্যাকফুটে ছিল। তারপর প্রতিটি ম্যাচে বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন তারা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। দারুণ খেলে একের পর এক ম্যাচ জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। এক গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দিকে তাকালেই পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠবে। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে যেভাবে আফগানদের বিপক্ষে ২০১ রান করেছিলেন তাতে করে অজিদের ব্যাটিংয়ের ধার সম্পর্কে আবারও স্পষ্ট ধারণা মিলে। ওয়ার্নার-মার্শ-ট্রেভিসদের কবজির জোরও কম নয়। যে কেউ সেঞ্চুরি পেয়ে ফাইনালে স্বাগতিকদের বড়সড় ধাক্কা দিতে পারেন। আর অ্যাডাম জাম্পা বল হাতে হতে পারেন বড় ত্রাস।

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই স্টেডিয়ামের যাত্রা হয়েছে। নিজেদের মাঠে ফাইনালে উঠে ভারত তো চাইবেই তৃতীয় শিরোপা উৎসবটা সেরে রাখতে। সবরমতি নদীর তীরের শহরের স্টেডিয়ামে পুরো দেশবাসীর চোখ থাকবে এই ম্যাচকে ঘিরে। রোহিত-কোহলিদের হাতে ট্রফি দেখতে পেলেই যে তদের বড় স্বস্তি। তবে ট্রফি জিতে রেকর্ড গড়া অজিরা তাদের প্রত্যাশা নস্যাৎ করে এগিয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।  

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn