কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তিনি  ১০৩ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রে ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্র স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই ভোটগ্রহণ চলে।এই নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। সকাল ১১টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী মনিরুদ্দিনের সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার কারণে পৌরসভার ২১ নং ওয়ার্ডের সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে একঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এদিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু এজেন্টদের বের করে দেওয়া, জাল ভোট দেওয়া ও ধীরগতিতে ভোট গ্রহণের অভিযোগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হোচ্ছামিয়া হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর মনিরুল হক সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান। বিএনপির এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, ধনাইছরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিরাগতরা ঢুকে জাল ভোট দিচ্ছেন। রামকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে জোর করে তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটমনিরুল হক অভিযোগ করেন, কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রের ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বসে আছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটাররা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে সকাল ১১টার দিকে ২৭ নং ওয়ার্ডের শ্রী ভল্লবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশ থেকে ৮টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ককটেল উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনে মেয়র পদে কাগজে-কলমে চারজন প্রার্থী রয়েছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা (নৌকা) এবং বিএনর মো. মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে। মেয়র পদে অপর দুই প্রার্থী হচ্ছেন, জেএসডি মনোনীত শিরিন আক্তার (তারা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর মামুনুর রশীদ (টেবিল ঘড়ি)। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৪ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন। এসব ভোটারের জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে ১০৩টি ভোটকেন্দ্র ও ভোট কক্ষ রয়েছে ৬২৮টি। ভোট গ্রহণে ১ হাজার ৯৮৭ জন প্রিজাডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৪৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃংখলার তদারকি করছেন। কুসিকের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি রয়েছে ইসি এবং স্থানীয় প্রশাসনের। কোনো ভোট কেন্দ্রে ভোটের পরিবেশ বিঘ্নিত হলে তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যাবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn