সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এরমধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন তাহিরপুরের মানুষ। ‘কারেন্টে আমরা সকলেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই কারণে গত কয়েকদিনে কারেন্ট না থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছে। যে অবস্থা হয়েছে মনে হয় কারেন্টের ভরসা বাদ দিতে অইব। একবার গেলে আর খবর থাকে না। ১০-১৫ মিনিট কারেন্ট পাইলে থাকে না ২-৩ ঘন্টা। প্রচন্ড গরমের মাঝে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। এখন কেরোসিন ও মোমবাতি কিনে চলছি। জানি না এভাবে আর কত দিন কষ্ট করতে হবে।’ কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজারের বাসিন্দা বিল্লাল মিয়া ও সাদিক মিয়া।

জ্বালানি সংকটের কারণে সরকারি ঘোষণায় লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে তাহিরপুরের মানুষ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন। এই উপজেলায় ঘন্টার পর ঘন্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। এমন অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে তাহিরপুরের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেছে সিলেটটুডে। তারা জানিয়েছেন, গড়ে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোনে চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল নেটওয়ার্কও থাকছে না। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসা ও অফিস কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে এই পরিস্থিতির জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাহিরপুর কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহও মিলছে না। এ জন্যই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়ন বীরনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী সাদেক আলী ও রাহী আহমেদ সিলেটটুডেকে বলেন, ‘সারাদিনের মধ্যে এক ঘন্টা বা এর একটু বেশি বিদ্যুৎ ছিল। আর বাকি সময় আমাদের নিয়ে চোর-পুলিশ খেলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বেচাকেনা করতে পারি-না। একে তো প্রচণ্ড গরম; তার মধ্যে বিদ্যুৎ নেই। তীব্র গরমে অস্থির জীবন। ‘বিদ্যুৎ কখন থাকবে না, আর কত সময় থাকবে তার তালিকা হলেও তাহিরপুরে নেই তালিকা। রাত আটটার মধ্যে দোকান বন্ধ করতে হবে। ভাল কথা। এরপর তো বিদ্যুৎ থাকবে। কিন্তু তাও জুটছে না।’ দলিল লেখক খোরশেদ আহমেদ বলেন, ‘বিদ্যুতের লুকোচুরি আর সহ্য হচ্ছে না। বিদ্যুৎ থাকলে গরমে একটু সস্থি পেতাম। এখন তাও মিলছে না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুব বেশি হলে এক দেড় ঘন্টা বিদ্যুৎ পাই আমরা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সারাদিনে বিদ্যুৎ নাই কইলেই চলে। অফিসের কাজ কর্ম করতে পারছি না। যার ফলে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’ উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শরীফুল ইসলাম ও রফিক মিয়া বলেন, ‘বিদ্যুৎ কোথাও ১৬ ঘন্টা আবার কোথাও গড়ে ১৮ ঘন্টা থাকছে না। কোনো দিন এর চেয়েও বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে।’ পল্লী বিদুতের তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্ব থাকা সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) ইকরাম হোসেন জনি বলেন, ‘আমাদের চাহিদা ৭ মেগাওয়াট। পাচ্ছি ২ থেকে ২ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ কখন থাকবে আর কখন থাকবে না এই তালিকা করলেও এখন তা প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ আমাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত দিচ্ছে না। তাই আরও কিছু দিন দেখে তা প্রকাশ করা হবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn