মনীষা বাল্মিকী নামে এক গরিব মেয়েকে চারটে বীরপুরুষ ধর্ষণই শুধু করেনি, মনীষার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে, জিভও কেটে নিয়েছে । কেন করেছে ওরা এই নির্যাতন? কারণ মনীষা মেয়ে। অন্যদের মতো আমি বলবো না কারণ মনীষা নিচু জাত। কেন, উঁচু জাত বুঝি ধর্ষণের শিকার হয় না? হয়। ভারতে এই জাতপাত আইনত নিষিদ্ধ হলেও এটি সকলে মেনে চলে। ওপরে ওপরে না মানলেও ভেতরে ভেতরে মানে। আমার কত প্রগতিশীল বন্ধুর সার্টের ফাঁক দিয়ে দেখেছি উঁকি দিচ্ছে সাদা পৈতে। জাত গোত্র হাবিজাবি সব দেখে তবে এরা বিয়ে করে। পুরুষতন্ত্রের বিচারে মেয়েদের একটাই জাত, সেটা হলো নিচু জাত। সুতরাং মেয়েদের উচুঁ নিচু সব জাতের পুরুষই ধর্ষণ করতে, হত্যা করতে দ্বিধা করে না।

মনীষা শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেনি। গরিবের মৃত্যুতে কারও কিছু যায় আসে না। কিন্তু যেহেতু মনীষার হাল অনেকটা নির্ভয়ার মতো, গণধর্ষণের পর মৃত্যু — তাই পুরোনো প্রতিবাদ মনে পড়েছে লোকের। চেঁচিয়ে কিচ্ছু হবে না। চেঁচিয়ে, ধর্ষকদের ফাঁসি দিয়ে কিচ্ছু হয়নি, ধর্ষণ বন্ধ করা যায়নি। ফাঁসির চেয়েও যেটি ভয়াবহ, সেটির নাম পুরুষতন্ত্র । পুরুষেরা ফাঁসির ভয় ভুলে যায়, পুরুষতন্ত্রের শিক্ষা ভোলে না।

যতদিন নবজাতকের পুরুষাঙ্গ দেখে পরিবারের লোকেরা আনন্দে আত্মহারা হবে, যতদিন মেয়ে-জন্ম অনাকাঙ্ক্ষিত থাকবে, যতদিন পণপ্রথা টিকে থাকবে, যতদিন মেয়েরা যৌনবস্তু হিসেবে চিহ্নিত হবে, যতদিন মেয়েরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থাকতে যাবে , যতদিন সিঁদুর শাঁখা হিজাব বোরখা পরতে হবে, যতদিন স্বামীর নামে পরিচিত হবে, যতদিন পুরুষ প্রভু নারী দাসি’র কাঠামো রয়ে যাবে, যতদিন বেশ্যাপ্রথার অস্তিত্ব থাকবে, যতদিন পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্র বজায় থাকবে, ততদিন ধর্ষণ চলবে। কারণ ধর্ষণ ব্যাপারটা আগাগোড়া পুরুষতান্ত্রিক, আগাগোড়াই নারী-বিদ্বেষ। ধর্ষণ যারা করে তারা জন্মের পর থেকেই পুরুষতন্ত্র দ্বারা মগজধোলাই হওয়া, তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নারীকে ভোগ করা , নির্যাতন করা, নারীকে মেরে ফেলা, কেটে ফেলার একশ’ভাগ অধিকার তাদের আছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn