শহীদনূর আহমদঃ  গ্রামবাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ষাঁড়ের লড়াই। মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর মাসুদ আহমদের উদ্যোগে এই ষাঁড়ের লড়াই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের হাঁসকুঁড়ি ও ধৈলমনশা গ্রামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শনিবার(১১ মার্চ) দিনব্যাপী এই ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবুল হোসেন।

ষাঁড়ের লড়াই দেখতে দর্শক আসেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই ষাঁড়ের লড়াইও ছিল বেশ উপভোগ্য। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ প্রতিযোগিতা। দর্শকদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে একে একে প্রবেশ করে বাঘাশাহ, বুলেট, রেব, সেলিমেশিন, খতরনাখ, কালারচান, সাধুরাজ, দলা সাধু, রকেট,সহ বিভিন্ন নামের ষাড়। জয়পরাজয়ের ধারাবাহিকতায় দিনভর শিং লড়াইয়ের শক্তি প্রদর্শন করেন প্রতিযোগিরা। ষাঁড়ের লড়াই নৈপুণ্যে দর্শকদের মধ্যে তৈরী হয় টান টান উত্তেজনা। মুহু মুহু করতালিতে মুখরিত হয় খেলা প্রাঙ্গন।

জেলাসহ সিলেট সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক ষাঁড় অংশ নেয় লড়াইয়ে। লড়াইয়ে অংশ নেয়া প্রতিটি ষাঁড়ই ছিল বাহারী রংয়ের আর্কষণীয় দেহের। সৌখিন মালিক (দেশি ও প্রবাসী) নানা রং ঢং আর বাধ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাদের দলবল নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এর আগে ভোররাত থেকেই প্রতিযোগিতার মাঠে বাধ্যযন্ত্রসহ একের পর এক ষাড়, মালিক ও ওই দলের সমর্থকরা মাঠে আসতে থাকেন।

আয়োজরা জানান, একসময় গ্রামেগঞ্জে নিয়মিতই হতো ষাঁড়ে লড়াই। আঞ্চলিকভাবে কোনো এলাকা এর নাম ডেখামাইর বা বিছালের লড়াই নামেও ডাকেন স্থানিয়রা। দীর্ঘদিন ধরে  গ্রামীন এই খেলার আয়োজন না হওয়ায় বিলুপ্তির পথে ষাঁড়ের লড়াই, ঘোড়দৌড়, মুরগ লড়াইসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা। হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আয়েজন করতে সংশ্লিষ্টের প্রতি আহ্বান বিনোদনপ্রেমী মানুষজন।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবুল হোসেন বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে ষাঁড় নিয়ে এসেছেন। হাঁসকুঁড়ির মাঠে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন আয়েজন না হওয়ায় বিলুপ্তির পথে ষাঁড়ের লড়াই। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ। আশা করছি এই আয়োজন অব্যাহত রাখতে সরকারের পাশাপাশি সকলের সহযোগিতা পাবো। সকালে ষাঁড়ের লড়াইয়ের উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সচিব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত হোসেন, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রাইজুল,  সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম শহীদ, সামুয়েল কবীর, নায়েব আলী প্রমুখ। লড়াই শেষে বিজয়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn