ঝুনু চৌধুরী সুনামগঞ্জ/সালেহ আহমেদ বিশ্বম্ভরপুর:: সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৪ নির্বাচনী এলাকা। এই আসনে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল থাকার পরও আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় তারা। ২০১৪ সালে এসেও আওয়ামী লীগ ফের জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় এরশাদের দাবির কারণে। উলেস্নখ্য, এক সময় এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন মেজর ইকবাল হোসেন চৌধুরী। এরপরই তিনি জাতীয় পার্টিকে এই আসনে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। এখনো তার কারণে জাতীয় পার্টির কিছু ভোট ব্যাংক রয়েছে। এ কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট তার স্ত্রী বেগম মমতাজ ইকবালকে মনোনয়ন দেয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ যুবলীগ ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও তিনি এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন মেজর ইকবাল হোসেন চৌধুরীর ছেলে ইনান ইসমাম চৌধুরী প্রিয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপিরও একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন মাঠে। তবে আওয়ামী লীগ এবারের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনটি মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে রাজি নয়।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের স্বজ্জন রাজনীতিবিদ আবদুজ জহুর। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়া। ২০০১ সালে তিনি ফের নির্বাচিত হয়ে হুইপ মনোনীন হন। এবারও তিনি মনোনয়নের জন্য মাঠে রয়েছেন। খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির বর্তমান সহ-সভাপতি নাদির আহমদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান সহ-সভাপতি আবুল মনসুর শওকত। এ ছাড়াও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরিনও মাঠে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান সাবেক সংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবীর ইমন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন এ নিয়ে বিরোধে জড়ালেও সম্প্রতি তারা একমঞ্চে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালন করছেন। এই দুইজনকে টপকিয়ে প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুল। হঠাৎ তিনি মারা যাওয়ায় আ’লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবারও মাঠে জোড়ালো প্রচারণা শুরম্ন করেন। দুই নেতাই এই আসনে একে অন্যকে ছাড় দিবেন বলে বলছেন তাদের ঘনিষ্ঠদের। তারা মর্যাদাপূর্ণ এই আসনটি আর জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে নারাজ। এই আসনে আওয়ামী লীগের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। জাপার মনোনয়ন আটকাতে তারা একাট্টা হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবীর ইমন টানা দুইবার জেলা পরিষদের প্রশাসক থাকার সুবাদে দুটি উপজেলার ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করায় কিছুটা সুবিধায় রয়েছেন। বিশেষ করে জেলা শহরে বিদু্যৎ সাবস্টেশন নির্মাণে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তিনি আলাদাভাবে আলোচনায় রয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনী বিশেস্নষকরা বলছেন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পাঁচবারের মন্ত্রী প্রয়াত মেজর ইকবালের কারণে এখনো জাতীয় পার্টির সম্মানজনক ভোট রয়েছে এই আসনে। তবে একক নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য নেই দলটির। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন্দল ও এরশাদের গো ধরার কারণে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে আসনটি বার বার ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এভাবে নিজেদের আসনটি ছাড় দেয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হতাশ। সদর আসনের মতো গুরম্নত্বপূর্ণ আসনে দলটি ক্ষমতায় থাকার পরও নিজেদের সংসদ সদস্য না থাকায় সবসময় আফসোস করেন নেতাকর্মীরা। তারা এবার এই আসনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের জোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এতদিন জাতীয় পার্টিতে একক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ নির্ভার থাকলেও মেজর ইকবাল হোসেনের পুরনো কর্মী ও স্বজনরা এই আসনে প্রার্থী হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছেন তার ছেলে ইনান ইসমাম চৌধুরীকে। তিনি তার বাবার নদীর উত্তরপাড়ের ভোটব্যাংক উদ্ধার করতে নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি দুটি উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। প্রিয় নেতার ছেলেকে কাছে পেয়ে আবেগাপস্নুত হয়ে পড়ছেন জাতীয় পার্টির পুরনো দিনের নেতাকর্মীরা। ইকবালপুত্রের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের কারণে কিছুটা সুবিধায় থাকলেও ইনান ইসমাম চৌধুরী তার বাবার পরিচয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হোসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে একাধিকবার নানা বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। সর্বশেষ গত ১৪ ফেব্রম্নয়ারি একটি অনুষ্ঠানে ইনানকে নিয়ে দাওয়াতও খেয়েছেন এরশাদ। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মনে প্রবল দাগ কাটেন।
জামায়াত এই আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে পৌর জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট শামছুদ্দিন আহমদকে। নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির আবুল মনসুর শওকত বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি থেকে বিএনপির মূল রাজনীতিতে মাঠে কাজ করছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকে প্রার্থী হতে উদ্ধুদ্ধ করছেন। একই দলের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী নাদির আহমদ বলেন, তারা আগামী নির্বাচনের আগে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এই আসনে মনোনয়নের জন্য তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তাকে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী ইনান ইসমাম চৌধুরী বলেন, তার বাবা প্রয়াত মেজর ইকবাল হোসেন চৌধুরী জাতীয় পার্টিকে এই অঞ্চলে তৃণমূল পর্যন্ত্ম নিয়ে গিয়েছিলেন। এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি আজীবন কাজ করেছেন। তিনি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। তার পুরনো বন্ধুবান্ধব ও কর্মীরা তাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দলীয় চেয়ারম্যানসহ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে মাঠে কাজ করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, মর্যাদাপূর্ণ সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জননেত্রী শেখ হাসিনা গত জাতীয় নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। পরে মহাজোটের শরিক দল এরশাদকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতাশ হন। তবে এবার তারা কোনোভাবেই জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি আর ছাড় দেবেন না। এবারও তাকে মাঠে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, তিনি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে বিশ্বম্ভরপুর ও সদর আসনে গুরম্নত্বপূর্ণ উন্নয়ন কাজ করেছেন। তাদের দলটিও আগের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী হয়েছে। জাতীয় পার্টির এখন হাজার হাজার নেতাকর্মী। তারা এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। ইনশালস্নাহ আগামীতে তিনিই এই আসনে মনোনয়ন পাবেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn