সিলেটঃঃ বিশিষ্ট লেখক, কথাসাহিত্যিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট ছিল। একটি অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সর্বমোট ৩৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। হামলার দিনে এ ক্যামেরাগুলোর মধ্যে ৩২টি সচল এবং বাকি ৪টি নষ্ট ছিল। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য গ্লোবাল ট্রেড করপোরেশনের পক্ষ থেকে ক্যামেরাগুলো বেশ আগে থেকেই সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন শাবি ক্যাম্পাসের একজন তত্ত্বাবধায়ক ও সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মো. দুলাল আহমেদ। অনুসন্ধানে জানা যায়, নষ্ট ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে ১টি ভাইস চ্যান্সেলর বাংলোতে ঢোকার মুখে, ১টি গেস্ট হাউসের সামনে, ১টি ইউনিভার্সিটি সেন্টারের সামনে এবং অন্যটি শাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে স্থাপিত। এদিকে হামলার ঘটনাস্থল মুক্তমঞ্চের ৪ দিকে মোট ৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। মুক্তমঞ্চের সামনে হ্যান্ডবল গ্রাউন্ড ও মুক্তমঞ্চের উত্তরে অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং ‘এ’ এর সামনের অংশের জন্য ১টি, মুক্তমঞ্চের বিপরীত দিক পশ্চিমে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ১টি এবং অন্যটি বামে দক্ষিণ দিকে ফুডকোর্ট এলাকার জন্য। তবে সেগুলো একটু দূরে এবং অন্যদিকে ঘোরানো রয়েছে জন্য মুক্তমঞ্চ পুরোপুরি সিসিটিভির ক্যামেরার আওতায় আসেনি।

শাবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ  জানান, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় সবসময় সিসিটিভি ক্যামেরা চালু রয়েছে। মাঝে মাঝে ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়, সেটা জানার পরপরই আবার ঠিক করানো হয়।’ তবে ঘটনার দিনে কয়টা ক্যামেরা নষ্ট ছিল তা জানাতে পারেননি তিনি। হামলার ঘটনার দিনের (শনিবার, ৩ মার্চ) সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে জানা যায়, সকাল প্রায় ১০টায় (এনবিআর টাইম) শাবির প্রধান ফটক দিয়ে বাইসাইকেলে করে ক্যাম্পাসে ঢোকে হামলাকারী ফয়জুল। সে সাইকেল চালিয়ে সরাসরি ৯টা ৫২ মিনিটে (চেতনা-৭১ এর সিসি ক্যামেরার সময়) বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চেতনা-৭১’ এ পৌঁছায়। এ সময়ের দুই মিনিট আগে ৯টায় ৫০ মিনিটে (চেতনা-৭১ এর সিসি ক্যামেরার সময়) অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল হেঁটে ‘চেতনা-৭১’ অতিক্রম করেন। এরপর অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল সকাল ১০টায় ৬ মিনিটে (এনবিআর টাইম) শাবির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে পৌঁছান। তবে ভিডিও ফুটেজে হামলাকারী ছেলেটিকে এখানে দেখা যায়নি। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে দু’জন পুলিশ ও দু’জন শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকরা হলেন ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক জিবেস কান্তি সাহা এবং রিতেশ্বর তালুকদার। শিক্ষক জিবেস কান্তি সাহা এবং রিতেশ্বর তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তারা আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে ‘ইইই’ বিভাগের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে যান। তারপর অনুষ্ঠান শেষে দুপুর ২টা-সোয়া ২টার দিকে অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং ‘বি’ এর পাশের টং-এ (খাবারের দোকান) স্যারের সঙ্গে চা পান করেন। পরবর্তীতে বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তারা।
উল্লেখ্য, ৩ মার্চ বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শাবি ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ড. জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে ২৪-২৫ বছর বয়সী ফয়জুল নামের এক তরুণ। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাতেই জাফর ইকবালকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn