আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে সেমিনার ও এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। সোমবার (১৫ মে) সকালে স্থানীয় সার্কিট হাউজ কনফারেন্স রুমে প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪ ও প্রেস কাউন্সিল প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি প্রতিপালন এবং তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অবহিতকরণ শীর্ষক এ সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। প্রেস কাউন্সিলের তত্ত¡াবধায়ক মো.শাখাওয়াৎ হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো.মাসুদ খান, সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো.এহসান শাহ ও জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক আব্দুস ছাত্তার প্রমুখ। সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সুনামকন্ঠ সম্পাদক বিজন সেন রায়,সুনামগঞ্জের খবর সম্পাদক পংকজ দে, মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস,বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস এর জেলা প্রতিনিধি আল-হেলাল মো.ইকবাল মাহমুদ,সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজান, দৈনিক কালের কন্ঠ প্রতিনিধি শামস শামীম, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি চৌধুরী এমরানুল হক,সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি হিমাদ্রি শেখর ভদ্র মিঠু,সুনামগঞ্জের সময় সম্পাদক সেলিম আহমদ, আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার বিন্দু তালুকদার,শহীদনূর আহমদ, দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন প্রতিনিধি রাজু আহমেদ রমজান ও ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি আসাদ মনি প্রমুখ।

এসময় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রওনক আহমদ বখত,বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি এডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু,রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য আনোয়ারুল হক,কেজি মানব তালুকদার,দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান পীর, ইউএনবি প্রতিনিধি অরুন চক্রবর্তী,প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি এডভোকেট খলিল রহমান,সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শ্যামল,দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি মো.বুরহান উদ্দিন,আমাদের অর্থনীতি প্রতিনিধি সাহাব উদ্দিন আহমদ, দৈনিক বাংলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম , চ্যানেল এস এর জেলা প্রতিনিধি ফুয়াদ মনি,আমাদের নতুন সময় প্রতিনিধি দেওয়ান ইমন রাজা,প্রেসক্লাব সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া, দৈনিক স্বাধীন বাংলা প্রতিনিধি বাবুল মিয়া, দৈনিক আমার সংবাদ প্রতিনিধি গাজী আফজাল হোসেন,দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার প্রতিনিধি এম মাহফুজুর রহমান সজিব ও দৈনিক জৈন্তাবার্তা প্রতিনিধি জাকিয়া সুলতানা সহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াৎ করেন দৈনিক আজকালের খবর প্রতিনিধি হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। গীতা পাঠ করেন বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিনিধি কর্ণবাবু দাস। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের অনেক উঁচু স্থানের মানুষ মনে করতেন বলেই পেশাগত মান বাড়ানো ও কর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছেন। পেশাদার সাংবাদিকদের প্রেস কাউন্সিলের ২৫টি আচরণবিধি ও নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালা মেনেই সত্য ও বস্তনিষ্ঠ খবর প্রকাশের মাধ্যমে সাংবাদিকরা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন। সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরীসহ তাদের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। তবে এই কাউন্সিলের ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পেশাদার সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বাস্তব ও ন্যায় সংগত লেখনীর মাধ্যমে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বাড়াতে এগিয়ে আসুন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই এটা বলা ঠিক না উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান মোঃ নিজামুল হক নাসিম বলেন, অনলাইন নিউজ পত্রিকা প্রেস কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই এটা বলা ঠিক না। এটা বলা যায় এই আইনের কিছু কিছু দিক পরিবর্তন ও সংশোধন করা দরকার আছে। বাংলাদেশে আইন আছে কিন্তু আইনের সঠিক ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। ব্যক্তিস্বার্থে নয় জনস্বার্থে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হলে আমি মনে করি সঠিক হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করলে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরও বলেন,আপনি যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যা মনে চাইল তা ফেইসবুকে ও অনলাইনে ইচ্ছেমতো লেখলেন তার জন্য ও অনলাইন পত্রিকা নিয়ন্ত্রণ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও মান উন্নয়নের স্বার্থে প্রেস কাউন্সিল আইন ১৯৭৪ ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এই আইন তৈরি করা হয়েছে। আজও তা বাস্তবায়নের জন্য সরকার কাজ করছে। প্রেস কাউন্সিলে তিরস্কার করা ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই আদালতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করছি কাউন্সিলকে আরো ক্ষমতা দিন তাহলে কোন ফরিয়াদি আদালতে যাবেনা। তাই প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বাড়াতে হবে এটা আমি একা চাচ্ছিনা এখন এটা সারা দেশ জাতি ও সাংবাদিকরাই চাচ্ছেন। আমি আশা করছি অবশ্যই আইন বদল হবে প্রেস কাউন্সিলে মামলাও হবে। প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের বিচারে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করার আইন হচ্ছে।

তিনি বলেন,সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন প্রেস কাউন্সিলে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক,প্রতিবেদক ও স্থানীয় প্রতিনিধির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। এই মামলায় আমিই রায় দিয়েছিলাম। আমরা রায়ে তিরস্কার করে বলেছিলাম নইম নিজামের মতো একজন সাংবাদিকের পরিচালিত পত্রিকায় কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের মানহানীকর সংবাদ প্রকাশ হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন,শুধু নইম নিজামই নন আবেদ খানের মতো বিচক্ষণ সাংবাদিকও প্রেস কাউন্সিলের রায় মেনে নিয়েছেন। স্থানীয় কিছু সংবাদকর্মীরা মনে করে তিরস্কৃত হওয়া এটা কোন শাস্তি না। কিন্তু পত্রিকার সম্পাদকরা ভালো করে জানেন প্রেস কাউন্সিলের তিরস্কার পাওয়া এটা একজন সম্পাদকের জন্য কত বড় শাস্তি এবং অপমানজনক। তিনি বলেন,সাংবাদিকতা করবো আর আইন মান্য করবনা এটা হতে পারেনা। সাংবাদিকদেরকে অবশ্যই আইন মেনে চলতে হবে। অনলাইনের নামে বাংলাদেশে ত্রাস হচ্ছে। এ ধরনের কাজ বন্ধের জন্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলা।

উল্লেখ্য দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক আল-হেলাল তার দীর্ঘ বক্তব্য শেষে নিজের রচিত গান পরিবেশন করেন। সেমিনারের শুরুতে প্রেস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে অংশগ্রহনকারী সাংবাদিকদের হাতে ১টি কলম,ডায়রী ও প্রশিক্ষণ ধারনাপত্র প্রদান করা হয়। প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বলেন,বঙ্গবন্ধু যখন প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করেন তখন এদেশে কোন বেসরকারী টেলিভিশন বা অনলাইন ওয়েবপোর্টাল ছিলনা। তিনি সংবাদপত্রকে জাতীয়করণ করার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশার মান বৃদ্ধির জন্যই প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করেছিলেন। তখনকার পরিস্থিতি এবং বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু এক নয়। তাই আমরা প্রেস কাউন্সিল শুধু প্রিন্ট পত্রিকাগুলোর উপর আইন প্রয়োগ করছি। অনলাইন নিউজপোর্টাল আমাদের অধীনে নয়। তবে সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন মিডিয়াগুলো প্রেস কাউন্সিলের ডাটাবেজ এর আওতায় আসবে। আমরা জেলা প্রশাসন বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত নিয়ে সকল সাংবাদিকদের একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ করার চেষ্টা করবো।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn