ফিদা হাসান রিসলু- অর্থনীতির অধ্যাপক মো: আইয়ুব আলী সরকারি কলেজ থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় ১৮ বছর। কিন্তু অবসর নেননি রাজনীতি আর প্রেসক্লাব থেকে। স্নেহের আতিশয্যে প্রায়শই তিনি সম্বোধনে আমাকে বলেন, অনেককে জানিয়েই বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক! আমি কুন্ঠিত হই। লজ্জিত হই। সংকুচিত হয়ে যাই। কেননা ঐ শব্দটার সঙ্গে অনেক-অসংখ্য মহত্ত্ব আর অনেক-অজস্র বীরত্বের বর্ণাঢ়্য ব্যাঞ্জনা গাঁথা রয়েছে। তাছাড়া আদর্শতো বায়বীয় কোন বিষয় নয়; রক্তে মিশে থাকা ব্যাপার-স্যাপার। মাথায় ঢুকে পড়া- শুদ্ধতার, ভালোলাগা-ভালোবাসার এক টইটম্বুর মুগ্ধতা। পেরেছি কী আমি, সেরকম কোন মুগ্ধতা ছড়াতে? তাইতো মনে হয়, অহেতুক পালক জুড়িয়ে কেউ বুঝি আমাকে ময়ুরপঙ্খী বানাতে চাইছেন। মনে হয়, নকল রাজা সাজিয়ে পক্ষান্তরে কেউ আমাকে সাজায় দিতে চাইছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে শুনিত কিংবা পঠিত সামান্য কিছুর সাথে তাঁর মত বিশালতা নিয়ে তাঁরই লেখা আত্মজীবনীর পাতায় পাতায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কর্মী থেকে সংগঠকের বৈঠা বেয়ে বহতা, দলীয়নেতা থেকে জননেতা হয়ে উঠা- একজন পরিপূর্ণ শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত পরবর্তী ডানাময় গতিময়তার পরতে পরতে যে উজ্জ্বলতার দীপ্তি বহমান; কাছে-পিঠে মেধার মোহিনী ধারে, বাগ্মিতার বিঁভুতি বরে কিংবা সততার সাবলিল স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে প্রাণান্ত করে যাওয়া- হাতেগোনা ছাড়া কাউকে তো আর তেমন করে দেখা যায়না! ইতিহাস ঘেটে- ঘুটে, না-দেখার শূন্যতা দিয়ে আগের বিখ্যাত তিন অগ্রজকে পাশে নিয়ে পরের অনুজদের দিকে তাকিয়ে একজন বহুমাত্রিক হুমায়ুন আজাদ যখন লেখেন, “অগ্রজরা তাঁর পাশে মাঝারি, অনুজরা তুচ্ছ এবং হাস্যকর”- সেটা নিয়ে তখন বিতর্ক হতে পারে অবধারিত, কিন্তু শেষবিচারে স্বাধীনতার আনয়নে আর সার্বভৌমত্বের প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুই থাকবেন অধিষ্ঠিত- সূর্যের মত সত্য।

সম্পর্কিত খবর

একথা মিথ্যা নয় এতটুকু, শৈশবে শুরু হওয়া শ্লোগান থেকে তারুণ্য-যৌবনের সবটুকু সময় জুড়ে তাঁর নামে স্পন্দিত হয়ে কম্পিত হয়েছি যতবার; একবারও তেমন করে কেঁপে উঠিনি প্রেয়সীর প্রণয় পিয়াসে। যতবার বলেছি, হাজার-হাজার বলেছি, শেখ, শেখ, শেখ মুজিব/ লও, লও, লও- সালাম; একবারও তেমন করে দৃশ্যমান বলিনি, জন্মদাতা পিতার নামে। যতবার বলেছি, লক্ষের কাছাকাছি বলেছি, এক মুজিব লোকান্তরে/ লক্ষ মুজিব ঘরে- ঘরে; একবারও তেমন করে বলিনি পূর্ব-পুরুষের নামে। তাঁকে নিয়ে যৎসামান্য যতটুকু পড়েছি; ধারে-কাছেও যাইনি অন্যকোন ব্যক্তি বিশেষকে নিয়ে। তাঁকে নিয়ে বক্তৃতায় যতবার বলেছি; তেমন করে বলিনি-এমন কথা, ছবির মুজিব নয়; আদর্শের মুজিব আমার পিতা। কবিতায় শুনিয়েছি- নির্মলেন্দুগুনঃ মুজিব মানে আর কিছু নয়/ মুজিব মানে মুক্তি, মুজিব মানে পিতার সাথে/ না-লেখা প্রেমচুক্তি।

চুক্তির সাথে পাহাড়ের দায় নিয়ে সাগরের মত বয়ে-বয়ে চলতে পারিনি বলেই বুঝি, হয়ে উঠতে পারিনি তাঁর আদর্শের সৈনিক। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে, ব্যক্তি আর পরিবার ভুলে গিয়ে ভালো-তো বেসেছি! একজীবনের যা কিছু সরব কিংবা নীরব প্রতিবাদ-প্রতিরোধের গুচ্ছ গুচ্ছ পুষ্প সাজিয়ে-তার মূল্যই-বা কম কিসে; দৃশ্যমান অনাদর্শের বিস্তৃত প্রাঙ্গনজুড়ে অদেখা আদর্শের অবিরত বাতায়নে? তাইতো আজকের এই শোকস্তব্ধ সমতলে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আপনাকে নিবেদন করতে চাইছি-সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, ভোর তোমাকে পদক দেবে, রাত্রি তোমাকে মালা দেবে, চাঁদ তোমাকে চন্দন দেবে, নদী তোমাকে দুধ দেবে, পলি তোমাকে পেশী দেবে, মানুষ তোমাকে কবিতার ভাষা দেবে, মানুষের স্বপ্ন তোমাকে কবরের ভেতরে কাফনে জড়িয়ে রাখবে। তুমি মরণশীল, তুমি মৃত্যুর নীল ভেতরে অমরত্বের বিমানে উড়বে।

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn