সিলেটের সরকারি শিশু সদন ‘ছোটমণি নিবাসে’ শিশুকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা।সিলেট নগরের বাগবাড়ি এলাকার সরকারি শিশু সদন ‘ছোটমণি নিবাসে’ দুই মাস ১১ দিন বয়সী শিশু নাবিল আহমদকে হত্যার দায় স্বীকার করছেন সেখানকার আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা। তবে সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নতুন। শিশু সদনের বাচ্চাদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পুরনো। এমন অভিযোগে এর আগেও তিনবার তাকে শোকজ করা হয়েছে।

ছোটমণি নিবাসের শিশুদের সাথে খারাপ ব্যবহার, মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে শোকজ করা হয়। তবে শোকজের পর তার এসব আচরণ পরিবর্তন করলে আবার তাকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানান ছোটমণি নিবাসের উপ তত্ত্বাবদায়ক (অতিরিক্ত) রুপন দেব। এদিকে শিশু নাবিল আহমদ হত্যার ঘটনায় আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে প্রধান আসামি করে শুক্রবার সন্ধ্যায় থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম মণ্ডল বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আয়া সুলতানা ফেরদৌসীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করলে বিকালে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ। শনিবার সরজমিনে দেখা যায়, ছোটমণি নিবাসের প্রধান ফটক ভিতর থেকে তালাবদ্ধ। ভিতর থেকে বাচ্চাদের হইহুল্লোর শোনা যাচ্ছিল। কিছু বাচ্ছাদের ভবনের ভেতরের সিঁড়িতে খেলা করতেও দেখা যায়।  করোনা সংক্রমণ এড়াতে বাইরের কাউকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান ভবনের দায়িত্বরতরা।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় সমাজসেবা কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এ ব্যাপারে তদন্ত করে মূল ঘটনা জানার পর এর রিপোর্ট সমাজসেবা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। এ ঘটনায় সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসানকে দিয়ে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসানও ইতোমধ্যে ছোটমনি নিবাস পরিদর্শন করেছেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন বলে জানান জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশ।

এদিকে ছোটমণি নিবাসে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট রয়েছে বলে জানান এখানকার উপতত্ত্বাবদায়ক (অতিরিক্ত) রুপন দেব। তিনি বলেন ১৭টি পদের বিপরীতে মাত্র আটজন কর্মী নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে। আমি নিজেও এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে। এর ভিতরে ২০১৯ সালে গর্ভকালীন ছুটি ও ট্রেনিংয়ের জন্য আমি ছুটিতে ছিলাম। তিনি বলেন, এখানে ০ থেকে ৭ বছর বয়সী ৪১ জন শিশু আছে। এর মধ্যে ০ থেকে ২ বছর বয়সী শিশু আছে ৬ জন। বাকিরা সবাই ৩ থেকে ৭ বছর বয়সী। এই শিশুদের মধ্যে ৭ বছর বয়সী ৩জন আছে শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিছুদিন আগে ২ বছর বয়সী একটি শিশুর কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ধরা পরেছে। বিভিন্ন ধরনের শিশু থাকে এখানে। যাদেরকে একজন আয়া সামাল দেন। আমাদের এখানে ৩ জন আয়া কর্মরত রয়েছেন। যাদের বয়স পঞ্চাসউর্ধ্ব। তারা ৮ ঘণ্টা পরপর ডিউটি করেন। কিন্তু এই সংখ্যক শিশুদের লালন পালন করতে প্রতি ৫জন শিশুর জন্য একজন আয়া প্রয়োজন।  

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশ বলেন, গত ২৩ জুলাই আমাকে বলা হয় একটি শিশু অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে যাওয়ার পর শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। তখন আমাদের নিয়মঅনুযায়ী থানায় রেগুলার মামলা দেওয়া হয়। এর পরে এ ব্যাপারটি তদন্তের জন্য আমি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করি। তিনি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রকৃত ঘটনাটি জানালে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করি। এরমধ্যে পুলিশও তদন্ত করতে আসে। এবং আমাদের কাছ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। অফিসিয়াল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে অভিযুক্ত আয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় ও বিলম্ব হয়েছে। নিবাস রঞ্জন দাশ বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে কত মানুষকে লালন পালন করি। এই একটি কাজের জন্য আমাদের সকল ভাল কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn