একে কুদরত পাশা-
বাউল সম্রাটখ্যাত আবদুল করিমের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উজানধল গ্রামে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী শাহ্ আব্দুল করিম লোকউৎসব। শুক্রবার কাল থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে করিমভক্তরা এসে জমায়েত হোন উজানধল গ্রামের মাঠে। বিকেল ৫ টায় শাহ্ আব্দুল করিম লোক উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিলেট মেট্রোপলিটন) এসএম রোকনউদ্দিন ও ফকির আলমগীর ।
শাহ আব্দুল করিম পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও দিরাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক একে কুদরত পাশা, ধল দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সোয়েব হাসান এবং লোকশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের যৌথ পরিচালনায়, আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিলেট মেট্রোপলিটন)এসএম রোকনউদ্দিন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দিরাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা সফিউল আলম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ড. মুজিবুর রহমান, দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুজ্জামান পাবেল, প্রবীন সাংবাদিক হাবিবুর রহমান তালুকদার, দিরাই প্রেসক্লাব সভাপতি সাশছুল ইসলাম সরদার, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাউল শাহ আবদুল তোয়াহেদ।
সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যান্ত বাউল আপেল মাহমুদ ও সাবিনা ইয়াছমিনের সঞ্চালনায় ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘আমি বাংলামায়ের ছেলে’, ‘আগে কি সুন্দও দিন কাটাইতাম’, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘আমি এই মিনতি করি রে’, ‘কেমনে ভুলিব আমি’র মতো শাহ আবদুল করিমের কালজয়ী সব গান পরিবেশন করেন দেশবরেন্য ফকির আলমগীর, বাউল আব্দুর রহমান, সাবিনা ইয়াছমীন, শিউলী, দুলালী, সহ স্থানীয় বাউল শিল্পীবৃন্দ গান পরিবেশন করবেন।
প্রয়াত শাহ আব্দুল করিমের স্মরণে আয়োজিত লোকউৎসবে কালনীরতীরে বসেছে সারাদেশের বাউল শিল্পী ও বাউল গানের ভক্তদের মিলনমেলা। শুক্রবার (৩ মার্চ) থেকে শুরু হওয়া ‘শাহ আবদুল করিম লোকউৎসব ২০১৭’কে কেন্দ্র করে বসেছে গ্রামীণ মেলাও। আজ শেষ হবে দুই দিনব্যাপী এই লোকউৎসব।
আবদুল করিমের স্মরণে আয়োজিত এ লোকউৎসবে শিল্পীর গানের বিকৃতি ও সংরক্ষণ নিয়েও কথা বলেছেন অনেকেই। শাহ আবদুল করিমের ভক্ত শাহ্ আব্দুল করিম ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি তুহিন আলম বলেন, ‘এখন অনেকেই জনপ্রিয়তার লোভে পড়ে করিমের গানের কথা ও সুর বিকৃত করছে। এটা কাম্য নয়।’
শাহ আব্দুল করিমের নিত্যসহচর শাহ্ আব্দুল তোয়াহেদ বলেন, শাহ আব্দুল করিমের শেষ স্বপ্ন ছিলো আব্দুল করিমসংগীত একাডেমী প্রতিষ্ঠা। আমি সবার কাছে দাবী জানাবো আসুন শাহ আব্দুল করিমের শেষ ইচ্ছে পূরনে আমরা সহযাত্রীহই। কারন এখানো শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য আব্দুর রহমান, রনেশ ঠাকুর সহ অনেকে জীবিত এরা যদি এ সংগীত একাডেমীর শিক্ষক হোন তাহলেই শাহ্ আব্দুল করিমের গানের আসল সুর ও কথা ঠিক রাখা সম্ভব।
গণসঙ্গীত শিল্পী ও বাংলা একাডেমীর ফেলো ফকির আলমগীর বলেন, ‘লোকউৎসবে উজানধল গ্রামের এসে আমি বসন্ত বাতাসে বিমোহিত হয়ে পড়েছি। করিম গানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সব ধরনের গান রচনা করেছেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাউল ছিলেন। তার স্মৃতি রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। তবে এই কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই তার প্রতি যোগ্য সম্মান দেখানো যাবে।’
দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যার হাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, শুধু লোক উৎসবকে উপলক্ষ করে শাহ্ আব্দুল করিমকে স্মরণ করলেই হবেনা। শাহ আব্দুল করিমকে নিয়ে সব সময়ই কাজ করতে হবে, শাহ আব্দুল করিমের বাড়ীতে বা লোক উৎসব মাঠে কেউ যদি জায়গা দিতে পারেন তাহলে আমি দিরাই উপজেলা পরিষদেও পক্ষ থেকে শাহ আব্দুল করিম উন্মুক্ত মঞ্চ করে দেবা। যেখানে সবাই শাহ্ আব্দুল করিমকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn