রুদ্র মিজান : ॥ আবুল মাল আবদুল মুহিত।মাননীয় অর্থমন্ত্রী । একজন ভদ্রজন। আমি বিশ্বাস করি তিনি নিজে দুর্নীতি করেন না। জেনে-বুঝে দুর্নীতিবাজদের প্রশয়ও দেন না। একটা সময় তাঁর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। বলবো সৌভাগ্য হয়েছিলো।

এ প্রসঙ্গে একটি গল্প না বললেই না। সময়টা ২০০৯ সাল। আমি তখন সিলেটের পাঠকপ্রিয় দৈনিক উত্তরপূর্বে নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। শ্রদ্ধেয় সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী ভাই বললেন, অর্থমন্ত্রীর লেখা সংগ্রহ করতে হবে।

তিনি সময় বেঁধে দিয়েছেন আগামীকাল সকাল ৭টায় তাঁর হাফিজ কমপ্লেক্সের বাসায় যেতে হবে। লেখা সংগ্রহ মানে- আবুল মাল আবদুল মুহিত মুখে বলবেন, আমি লিখবো। পরদিন সকালে যখন আমার ঘুম ভাঙে ঘড়িতে তখন সাতটা পেরিয়ে গেছে। দ্রুত টিলাগড়ের বাসা থেকে ধোপাদিঘিরপাড়। তাঁর বাসায়।

কিন্তু ততক্ষণে বাসা থেকে বের হয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত চলে গেছেন টুকেরবাজার। আমি বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনি। প্রায় নয়টার দিকে অর্থমন্ত্রী বাসায় ফিরেন। ক্লান্ত অর্থমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বেথাকা পুলিশ সদস্যদের বলছিলেন, ‘কাউকে ঢুকতে দিবা না। আমি খুব টায়ার্ড।’

এরমধ্যেই সোফায বসে থাকা আমার দিকে চোখ পড়ে তাঁর। দেখেই বললেন, ‘তুমি, তুমি এখন কেন!’
মাথা নিচু করে বললাম, সরি স্যার, আসতে দেরি হয়ে গেলো। বললেন, ‘তোমার কেন দেরি হবে। তুমিতো মন্ত্রী না। মন্ত্রী আমি।’ তারপর ডেকে নিয়ে বসালেন একটি চেয়ারে। পাশাপাশি তিনি। তিনি বলছেন। আমি টেবিলে কাগজ রেখে লিখতে শুরু করেছি মাত্র। অমনি কান্ডের সূত্রপাত।

আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির দুই বৃদ্ধ নেতা ঢুকলেন বাসায়। মন্ত্রী তাদের দিকে এক পলক তাকালেন। নেতৃবৃন্দ সালাম দিলেন। আস্তে করে উত্তর দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তারপর কানে কানে আমাকে বললেন, ‘চলো ভেতরে চলো।’ আমি কিছু একটা বুঝতে পারলাম। তবু না বুঝার ভান করেই মন্ত্রীর পিছু পিছু গেলাম। ভেতরে ছোট্ট একটি কক্ষ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। একটি টেবিল, একটি চেয়ার ও খাট।

অর্থমন্ত্রী মুহিত অনেকটা জোর করেই চেয়ারে বসালেন আমাকে। খাটে বসলেন তিনি। বললেন, ‘তুমি লিখবে, তাই তোমার চেয়ারে বসে লেখা উচিত।’ অতঃপর মন্ত্রী জানতে চাইলেন, ‘বলতো আমরা কেন ভেতরে চলে এলাম?’ আমি হয়তো বুঝতে পেরেছি। কিন্তু বলা মোটেও ঠিক হবে না।

তাই বোকার মতোই বললাম, ‘বুঝতে পারিনি স্যার।’ তারপরই শুনালেন স্মরণীয় সেই বাক্য। আবুল মাল আবদুল মুহিত বললেন, ‘দুই পঁচা নেতা চলে এসেছে। পঁচা নেতাদের সামনে সাহিত্য-শিল্প হয় না।’ এই বাক্য শোনার পর বিনম্র শ্রদ্ধায় মাথা নত হয় আমার।

যিনি এরকম কথা বলেন। বিশ্বাস করেন। নিঃসন্দেহে তিনি ভদ্রজন। তাঁকে দিয়ে দেশ-মানুষের কোনো অকল্যাণ হতে পারে না। তিনি দুর্নীতি করতে পারেন না। দুর্নীতিবাজদের প্রশয় দিতে পারেন না। আমি বিশ্বাস করি তিনি সত্য বলেন। ইতিমধ্যে শেয়ারবাজার কেলেংকারির তদন্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে তার প্রমাণ দিয়েছেন।

কয়দিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষুদ্রঋণের জন্য দারিদ্র বিমোচন হয়েছে। তিনি নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের প্রশংসা করেছেন। এ নিয়ে সমালোচনা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলবো, ব্যক্তিগত প্রতিহিংস্রা অর্থমন্ত্রীর নেই। তিনি নেতিবাচক রাজনীতি করেন না। তিনি মিথ্যা বলেন না। তিনি আমার, আমাদের শ্রদ্ধেয় ভদ্রজন।
লেখক : সাংবাদিক

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn