জিয়াউর রহমান লিটন-

দিরাই-শাল্লার হাওররক্ষা বাঁধ নিয়ে নির্ঘুম দিন কাটছে কৃষকদের। নির্ধারিত সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে এখনও ৩০ ভাগ মাটি ফেলা হয়নি।  নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বৈশাখী, তুফানকারি, বোয়ালিয়া, কডাইখালী গুরাখাইবাঁধ, সরাতোফা গ্রামের পাশে ভরাম হাওরে গরুচড়া বাঁধসহ অধিকাংশ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড)-এর কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের নেই  কোন তৎপরতা। গতকাল শনিবার হাওররক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিন বৈশাখী বাঁধে গিয়ে দেখা যায়- বাঁধ কেটে বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে বাঁধকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। একদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শঙ্কা বাড়ছে কৃষকদের। কৃষকরা জানান- বৈশাখী বাঁধের উপর চাপতি হাওরের সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের ভাগ্য নির্ভর করে। সময়মত বাঁধের কাজ না-করায় যে কোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।

বৈশাখী বাঁধের পিআইসি’র সেক্রেটারি নুরে আলম চৌধুরী বলেন- পাউবো’র জটিলতার কারণে সময়মত আমরা কাজ শুরু করতে পারি নাই। যেখানে কাজ শুরুর কথা ডিসেম্বরে সেখানে কার্যাদেশ পাই ১৮ ফেব্রুয়ারি। হঠাৎ করে নদীর পানি বেড়ে যাওয়াতে শ্রমিক না-পেয়ে মেশিন লাগানো হয়েছে। বাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ কর্মকর্তা শহিদুল্লা বলছেন- প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি পিআইসি গঠনে জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আশা করা যায়, ৩-৪ দিনের মধ্যে কাজটি শেষ হবে।

এদিকে, হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন প্রয়াত সুরঞ্জিতপুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত। গতকাল শনিবার উপজেলার চাপতি হাওর উপ-প্রকল্পের বৈশাখী বাঁধ, ভরাম হাওরের কডাইখালি বাঁধ, তুফানকারী ও বোয়ালিয়া বাঁধ পরিদর্শন করেন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়, কাউন্সিলর সবুজ মিয়া, মোহন চৌধুরী, ছুরত মিয়া, জুয়েল মিয়া, রায়হান, হাসান চৌধুরী, রাহাত মিয়া, ইকবাল সরদার, জ্যোতির্ময় দাসসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।

বাঁধ পরিদর্শন শেষে সৌমেন সেনগুপ্ত বলেন- বাঁধ ভেঙে যাতে ফসল হানির ঘটনা না-ঘটে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ, হাওরের বোরো ফসলের উপর রয়েছে আমাদের কৃষকের স্বপ্ন ও জীবন-জীবিকা।

জানা গেছে- দিরাই-শাল্লা উপজেলায় হাওররক্ষা বাঁধের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর মৌসুমী বাণিজের কারণে এখনও ২৭টি হাওর অরক্ষিত রয়েছ। পাউবো’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি বছরই কাজের অগ্রগতি নয়, উন্নয়ন বরাদ্দের টাকার প্রতিই দৃষ্টি থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কাজ নয়, পকেট ভারি করাই যেনো মোক্ষম বিষয়। পাউবো’র ‘নয়ছয়ের’ কারণে দিনদিন কৃষকদের নজরদারি বাড়ালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাঁধের কাজে গড়িমসি করায় ২৭টি হাওরে শত কোটি টাকার বোরো ফসল অরক্ষিত রয়েছে এখনও।

এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিরাই-শাল্লা উপজেলার ৪০-৪২ হাজার কৃষাণ-কৃষাণী। নদীর পনি বৃদ্ধি পাওয়ায় যে কোন সময় পাহাড়ে ঢল হলে অকাল বন্যায় ফসল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান কৃষকরা।

কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান- এখন হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নয়, নদী খনন জরুরি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন নামমাত্র বাঁধের কাজ করে তাদের মৌসুমী বাণিজ্য জমিয়ে তুলতে চান। প্রতি বছর সরকারের কোটি টাকা হাওরের ফসল রক্ষায় নয়, কিছু লোকের পকেট ভারি করছে।

বাঁধের কাজ শতভাগ নিশ্চিত করতে কাজের শুরুতেই প্রত্যেকটি প্রকল্প এলাকায় বাঁধের ডিজাইন, বাঁধের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কত ফুট হবে এবং এর বরাদ্দ কত তা উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও এখনো কোন বাঁধে তা টানানো হয়নি। মনগড়া মত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ খলিলুর রহমান জানান- এখানে বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই। সাইনবোর্ড তৈরি হয়ে গেছে, এ সপ্তাহে টানানো হবে। কাজ বুঝিয়ে পিআইসিদের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। কাজ বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন- “কমিটিই যদি হয় ২৪ জানুয়ারি তা হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ হয় কেমনে।”

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn