ঢাকা: মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড বাংলাদেশে। দুটো দলে ভাগ হয়ে গেছে জনগণ। আসলে যারা চায় না এই শোভাযাত্রা, তারা তো বাঙালি সংস্কৃতি বাদ দিতে চায়। তাই তারা এই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তসলিমা নাসরিন লিখলেন:

“সব কিছু লার্নিং দিয়ে হয় না, আনলার্ন বলে একটা টার্ম আছে, সেটি খুব ইম্পর্টেন্ট। একটি উদাহরণ দিই, সমাজে নারী আর পুরুষের সমতা এবং সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীবাদ বিষয়ে কিছু শেখার দরকার হয় না। বরং পুরুষতন্ত্র যেসব নারীবিরোধী এবং নারীবিদ্বেষী মন্ত্র জন্মের পর থেকে মানুষকে শিখিয়েছে বা মানুষের মগজে ঢুকিয়েছে সেগুলোকে শুধু আনলার্ন করতে হয়, বা মগজ থেকে বিদেয় করতে হয়।

আজকাল দেখছি ফেসবুক ব্যস্ত বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখের উৎসবে মঙ্গল শোভাযাত্রা চাই এবং চাই না’র কোলাহল নিয়ে। এ ক্ষেত্রেও আমার মনে হয় নতুন করে কিছু লার্নিং এর দরকার নেই, শুধু কিছু আনলার্নিং দরকার। পয়লা বৈশাখ আদিকাল থেকে বাঙালিরা পালন করে আসছে। বাঙালির সংস্কৃতিতে এটিকে নতুন করে যোগ করার দরকার নেই। বরং ওয়াহাবি বা জি-হা-দি সংস্কৃতি যেটি বাংলার মাটিতে কচুরিপানার মতো গজিয়ে ওঠা মসজিদ মাদ্রাসা ওয়াজ ইজতেমা ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতিতে ঢুকে যেতে চাইছে, সেটিকে বিয়োগ করা দরকার, বা সেটিকে সরিয়ে দেওয়া দরকার, অর্থাৎ জি-হা-দি সংস্কৃতি যা কিছু এ পর্যন্ত মানুষকে শিখিয়েছে বা মানুষের মগজে ঢুকিয়েছে সব আনলার্ন করতে হবে।

সেগুলোকে মগজ থেকে বিদেয় করলেই পয়লা বৈশাখের উৎসব পণ্ড করার কোনও দাবি কখনও উঠবে না। আর, বিদেয় করতে না পারলে বছর বছর পয়লা বৈশাখের উৎসব এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে হুংকার বাড়তে থাকবে। ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দেশজুড়ে যেভাবে আকারে আকৃতিতে দৈত্যের মতো বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে , একসময় এমন হবে, যে, পয়লা বৈশাখ কাহাকে বলে, মঙ্গল শোভাযাত্রা কী, তা ইতিহাস ঘেঁটে ভবিষ্যতের বাঙালিকে জানতে হবে”।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn