ইব্রাহীম চৌধুরী-
আমেরিকায় অভিবাসীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, বাংলাদেশিরা বৈচিত্র্যময় নিউইয়র্ক নগরীকে প্রতিমুহূর্তে সমৃদ্ধ করছেন। নিউইয়র্কে সেবা খাতের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি খাতে বাংলাদেশিদের প্রাধান্য চোখে পড়ার মতো। বাংলা নিউইয়র্কে ষষ্ঠ বহুল ব্যবহৃত ভাষা। ফেডারেল সরকার অভিবাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার সময়ে বৈধ-অবৈধনির্বিশেষে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অভিবাসীদের পাশে রয়েছে নিউইয়র্ক নগরী ও এর মেয়র ডি ব্লাজিও।  নিউইয়র্কের জনপ্রিয় মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেন, বহুমাত্রিক ও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বসবাসের কারণে নিউইয়র্ক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নগরী। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরের লোকজন নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। বাংলাদেশিরাও প্রাণচঞ্চল এ নগরীর শ্রেষ্ঠত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।  নিউইয়র্কের মতো নগরীর প্রধান নির্বাহী মেয়র। নগরীর সব সেবা খাত, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মেয়রের। ফেডারেল, রাজ্য ও নগর আইন প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্ব মেয়রের ওপর। বাজেটের দিক থেকেও আমেরিকার সবচেয়ে বড় নগরী নিউইয়র্ক। বার্ষিক ৮২ বিলিয়ন ডলারের বাজেটে চলা নিউইয়র্ক নগরীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩ লাখ ২৫ হাজার। আমেরিকার সবচেয়ে বড় স্কুল সিস্টেম নিউইয়র্ক নগরীর। বছরে ১১ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষার পেছনে এ নগরীর ব্যয় হয় ২১ বিলিয়ন ডলার। এসবের নিয়ন্ত্রণ করেন নিউইয়র্কের মেয়র। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার শীর্ষ নগরী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক বর্তমান মেয়রের আমলে অন্যতম মানবিক নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

উদারনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাজিও ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর প্রথম দফা নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর বিপুল ভোটে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। অভিবাসীদের পক্ষে উচ্চকণ্ঠের কারণে মেয়র ডি ব্লাজিও বহুবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন রক ্ষণশীল আমেরিকানদের। এমনকি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছেন নিউইয়র্কবাসীর জনপ্রিয় এ নেতা। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা যায়, নথিপত্রের হিসেবে এ নগরীতে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশির সংখ্যা মাত্র ৮০ হাজার। তালিকাভুক্ত নয়, ভোটার রেজিস্ট্রেশন করেননি, নথিপত্রহীন বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা—সব মিলে  নিউইয়র্কে মোট বাংলাদেশির সঠিক হিসাব কারও কাছেই নেই।মেয়র ডি ব্লাজিও বলেছেন, নিউইয়র্ক ৮০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির ঠিকানা। বাংলাদেশিরা আমাদের নগরকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে শক্তি জোগাচ্ছেন। ফেডারেল সরকার অভিবাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার মুহূর্তে নিউইয়র্ক নগরী বাংলাদেশি অভিবাসী কমিউনিটির পাশে রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নিউইয়র্কবাসীদের জানা দরকার, বৈধ-অবৈধনির্বিশেষে নগর কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের বিনা মূল্যে আইনগত সহায়তা দিয়ে থাকে। নিউইয়র্ক নগরীর পরিচয়পত্র প্রদানসহ বিদ্যমান সব ধরনের সেবা প্রদান করে। অভিবাসী নিউইয়র্কবাসীদের জন্য সেবামূলক যেকোনো সহযোগিতা ও সংগতির সন্ধানে আরও তথ্যের জন্য ৩১১ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য মেয়র অফিস থেকে জানানো হয়েছে।
মেয়র ব্লাজিও বলেন, তথ্য অনুযায়ী নিউইয়র্কে বাংলা ষষ্ঠ বৃহত্তম ব্যবহৃত ভাষা। কমিউনিটি সার্ভে থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রধান পাঁচটি পেশায় বাংলাদেশি নিউইয়র্কবাসীদের প্রতিনিধিত্ব চোখে পড়ার মতো। এগুলো হচ্ছে ট্যাক্সিচালক, ক্যাশিয়ার, খুচরা বিক্রেতা, খাবার পরিবেশক ও গ্রাহকসেবা প্রদানকারী। তিনি জানান, অভিবাসীবিষয়ক মেয়রের অফিস সক্রিয়ভাবে ব্রঙ্কসে ও কুইন্সে বাংলাভাষী স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করছে। স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচির অধীনে বাংলাদেশি নিউইয়র্কবাসী অভিবাসীদের কল্যাণে সংগঠক হিসেবে দোভাষী হিসেবে এবং ইংরেজি ভাষার সহায়ক হিসেবে মেয়রের দপ্তরের লক্ষ অর্জনে সাহায্য করছেন। মেয়র অফিস থেকে জানানো হয়, বর্তমানে তাদের ১২ জন বাংলাভাষী স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। আগামী জুনে বাংলাভাষী স্বেচ্ছাসেবকদের আরেকটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। নিউইয়র্কে এ বিষয়ে উৎসাহী বাসিন্দারা অভিবাসী-বিষয়ক মেয়রের দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। বর্ধিঞ্চু অভিবাসী গোষ্ঠী হিসেবে বাংলাদেশিরা বিতাড়ন, বিদ্বেষমূলক অপরাধ এবং উসকে ওঠা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে কিছুটা ভীত। এসব বিষয়ে বাংলাদেশি নিউইয়র্কারের ব্যাপারে নগরীর মেয়রের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়র অফিস অব ইমিগ্রান্ট অ্যাফেয়ার্সের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন রয়েছে। যেখানে নিউইয়র্কের বৈধ, অবৈধ অভিবাসী-চলমান সময়ে তাঁদের সমস্যা এবং নিউইয়র্ক নগরী এবং মেয়র বিল ডি ব্লাজিওর উদ্যোগ হালনাগাদ রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn