নির্বাচন এলেই সারাদেশে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রার্থীদের কাছে নির্বাচন যত বড়ই কঠিন চ্যালেঞ্জ হোক না কেন, ভোটারদের কাছে তা একটি উৎসবের মতো। নির্বাচনের সময় পাড়া মহল্লার অলিগলি, চায়ের দোকান, অফিস আদালত সর্বত্রই ভোটাররা মেতে ওঠেন নির্বাচনী আলাপে। এসব আলাপে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও যেমন থাকে তেমনি থাকে প্রার্থীদের নিয়ে হাস্যরসের বিষয়টি। তবে এবার ময়মনসিংহ-৬ আসনের বাবা-মেয়ে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ওই আসনের ভোটারদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা।

অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন ফুলবাড়িয়া আসন থেকে মোট ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এইবার তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী সেলিমা বেগম সালমা (ঈগল), উপজেলা আওয়ামীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মালেক সরকার (ট্রাক), ডা. কে.আর. ইসলাম(কেটলী), মাহফুজুর রহমান বাবুল (লাঙ্গল), প্রিন্সিপাল আব্দুর রশিদ (গামছা)। তদবে সব প্রার্থীদের ছাপিয়ে এই আসনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বাবা-মেয়ে ভোটের লড়াই।

বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থীর মোসলেম উদ্দিনের বড় মেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিমা বেগম সালমা বলেন, ‘আমি ১৯৮৮ সালে থেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছি। কয়েক বছর ধরেই সরকারের উন্নয়ন চিত্র মা-বোনদের সামনে তুলে ধরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। ৩৮০টির মত উঠান বৈঠক করেছি। তৃণমূলের মানুষ ভালো নেই। তারা উন্নয়ন-বঞ্চিত। শিক্ষায়ও রয়েছে পিছিয়ে।

বাবার বিরুদ্ধে কেন লড়ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো পক্ষে লড়তে কোনো বাধা নেই। আমি আমার বাবাকে শ্রদ্ধা-সম্মান করি। আমিও মনোনয়ন না পেয়ে সাধারণ মানুষের চাপের মধ্যে প্রার্থী হয়েছি। সাধারণ ভোটাররা যাকে পছন্দ করবেন তাকেই ভোট দেবেন। ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হোক এটাই আমার চাওয়া। তবে বাবা মোসলেম উদ্দিন মেয়ের প্রার্থিতা সম্পর্কে বলেন, আমার মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ছিল। সে দেশে এসে পাগলামি শুরু করেছে। সে অত্যন্ত মেধাবী, তাই আধ-পাগলার মত হয়ে গেছে।

নৌকার প্রার্থী বলেন, নির্বাচনি উৎসব ফুলবাড়িয়াতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রায় এক ডজনের মত নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এর মধ্যে আমার ছেলে-মেয়েরাও ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমার প্রতিই আস্থা রেখেছে। যারা মনোনয়ন চেয়ে পায়নি, তাদের মধ্যে আমার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক সেলিমসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে কাজ করছেন। মানুষের জোয়ার উঠেছে নৌকার পালে বিজয় আমাদেরই হবে।

এদিকে বাবা -মেয়ের ভোটের লড়াইয়ের বিষয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মালেক সরকার বলেন, ফুলবাড়িয়ায় এমপি পরিবারের রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্যবসা। তাদের সবই লাগে। বাপও এমপি হতে চায়, ছেলে-মেয়েও চায়। একটা মানুষের জীবনে কতবার এমপিগিরি করা প্রয়োজন? তাদের পরিবারটিকে মানুষ এখন আর ভালোভাবে নেয় না। সাধারণ ভোটারসহ দলীয় নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। আশা করছি, আমার ট্রাক প্রতীকের বিজয় হবে।

এদিক গত তিনটি নির্বাচন বলতে গেলে প্রায় হেসেখেলেই নৌকা নিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছেছেন অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন। ভোটের অংকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পাঁচবারের সংসদ সদস্য এই প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতার ধারেকাছেও ভিড়তে পারেননি। তবে এবার চিত্র ভিন্ন। মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভোটাররা মনে করছেন, এবার এখানে ভোটের অংক অনেক জটিল। শেষ পর্যন্ত কী হবে সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।

এর কারণ হিসেবে তারা তিনটি বিষয়কে তুলে ধরেছেন, এক, ‘গৃহবিবাদের’ জেরে মোসলেমের বড় মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা রাজনীতির মাঠে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। দুই. সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন এবং তিন. দীর্ঘদিনের ‘এমপি পরিবারের’কর্তৃত্বের অবসানের বিষয়টিও ভোটের মাঠে সমানতালে নিয়ে এসেছেন তার প্রতিপক্ষকে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা ১৩ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৬। এর মোট আয়তন ৩৯৯ বর্গ কিলোমিটার। এর মোট ভোটার ২,৯২,১৬৩ জন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn