লন্ডন সংবাদদাতা:: হোম সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, অভিবাসন আইনের যেসব বিষয়ে বিতর্ক আছে সেগুলো তিনি ইতিমধ্যে পর্যালোচনা শুরু করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ভিসা (স্টুডেন্ট ভিসা) এবং কর্মসংস্থান ভিসার (ওয়ার্ক পারমিট, যা টিয়ার ২ নামে পরিচিত) বিদ্যমান কঠোরতা সংস্কারে আভাস দিয়েছেন। গত ৩ জুন রোববার বিবিসির এন্ড্রু মার শোতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ এসব কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে প্রণিত অভিবাসন নীতির কিছু বিষয়ে তিনি প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁর কথায় অভিবাসন নীতি শিথিল করার ইঙ্গিত মেলে। সাজিদ জাভিদ বলেন, টিয়ার ২ ভিসায় দক্ষ কর্মী আনার ক্ষেত্রে বার্ষিক কোটা নির্ধারনের বিষয়টি ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে খুব অল্প সংখ্যাক বিদেশি শিক্ষার্থী কোর্স শেষ করার পর ব্রিটেনে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে অভিবাসন আধিক্যের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের দায়ী করা অযৌক্তিক। অবৈধদের বসবাস অসহনীয় করে তুলতে থেরেসা মে ‘বিরূপ পরিবেশ’ (হস্টাইল এনভারনমেন্ট) সৃষ্টির যে নীতি অবলম্বন করেছিলেন, তার সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেন জাভিদ। তিনি বলেন, ওই শব্দজোট ব্যবহার করতে রাজি নন তিনি। তাঁর চাওয়া ন্যায়সঙ্গত অভিবাসন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।

জাভিদ জানিয়েছেন, মন্ত্রীসভার অনেকেই তাঁর সঙ্গে একমত। জাভিদের এসব বক্তব্যকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র নীতির সঙ্গে সরাসরি দ্বিমত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১০ সালে ডানপন্থী কনজারভেটিভ দল ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অভিবাসন আইনে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত থেরেসা মে ছিলেন রক্ষণশীল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধদের বিতাড়নে তিনি ‘বিরূপ পরিবেশ’ (হস্টাইল এনভারনমেন্ট) সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী একের পর এক বিতর্কিত আইন বাস্তবায়ন করেন। সরকারী নীতির অত্যাধিক কঠোরতায় দশকের পর দশক ধরে ব্রিটেনে বসবাস করছেন, এমন অনেকেই অবৈধ হিসেবে চি?িত হন। ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’ নামে পরিচিত এই ঘটনা এক পর্যায়ে তুমুল বিতর্ক তোলে। বাধ্য হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছাড়েন থেরেসা মের বিশ্বচ্চ অনুগত অ্যাম্বার রাড। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান সাজিদ জাভিদ। বিতর্ক সামাল দেয়ার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। ইতিমধ্যে তিনি অবৈধদের ব্যাংক হিসাব খোলা, অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার তথ্য ব্যবহার সহ বিতর্কিত কয়েকটি আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছেন। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি ধারার [৩২২ (৫)] বিতর্কিত ব্যবহারের মাধ্যমে এতদিন টিয়ার ১ ক্যাটাগরিতে থাকা স্কিলড ইমিগ্রেন্টদের স্থায়ী হওয়ার আবেদন প্রত্যাখান করছিল হোম অফিস। সাজিদ জাভিদ ওই ধারাটির প্রয়োগও আপাতত স্থগিত করেছেন।

সাজিদ জাভিদ বলেন, এসব আইন প্রয়োগ যথাযথ হচ্ছে কি-না, উদ্দেশ্য সাধনে এসব আইন কতটুকু কার্যকর সেসব বিষয়ে পর্যালোচনা জরুরি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু আইনের বিতর্কিত প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে টিয়ার ২ ভিসার অধীন ইইউ বহির্ভূত দেশগুলো থেকে বছরে ২০ হাজার ৭শ দক্ষ কর্মী আনার সীমা নির্ধারণ করা আছে। এই কোটা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গত ডিসেম্বর থেকে দক্ষ কর্মী আনা বন্ধ রয়েছে। এনএইচএস জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তাদের চিকিৎসক নিয়োগের ১৫শ আবেদন প্রত্যাখান করে দিয়েছে অভিবাসন বিভাগ। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। আর শিক্ষার্থী ভিসায় অত্যাধিক কড়াকড়ির কারণে দীর্ঘদিন যাবত আপত্তি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মোট অভিবাসন হিসাব থেকে শিক্ষার্থীদের বাদ রাখার আহবান তাদের।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn