ভক্তদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কেটেছে। শাকিব খান এখন শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। গত দেড় মাস নানা দেশে ছবির টানা কাজে আবহাওয়ার বৈষম্যের কারণে ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা এবং দুর্বলতায় ভুগতে থাকেন শাকিব। একই সঙ্গে সন্তানের চিন্তায় মানসিক চাপেও ভুগছেন তিনি। শারীরিক ধকল কাটিয়ে উঠলেও মানসিক যন্ত্রণায় বিধ্বস্ত এখন শীর্ষনায়ক শাকিব খান। দেড়মাস পর ২১ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ দেশে ফেরেন তিনি। তার কথায় সন্তান জয়ের জন্য মনটা খুব কাঁদছিল। তাই ছুটে এসেছেন। বাচ্চার জন্য শপিং করে এনেছেন। কিন্তু বিধিবাম, অনেক চেষ্টা করেও জয়ের মুখ দর্শন করতে পারেননি তিনি। ভাঙা মন আর মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে পরদিন রাতেই ‘সুপার হিরো’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নিতে চলে যেতে হয় তাকে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। শাকিবের পরিবারের লোকজন বলছে, শাকিব আসলে শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক কষ্টে বেশি ভুগছেন।

 কারণ তার পছন্দের তালিকায় এক নম্বর আসন দখল করে আছে শিশুরা। পৃথিবীতে শিশুরাই তার সবচেয়ে বেশি প্রিয়। এর উদাহরণ টানতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক আত্মীয় বলেন, শাকিবের একমাত্র বোনের একটি বাচ্চা রয়েছে। বেশ ক’বছর আগে তার জন্ম হয়। বাচ্চাদের পছন্দ করার কারণে শাকিব কাজের ফাঁকে ছুটে যেতেন বোনের বাচ্চাকে দেখতে। বাচ্চার জন্য সমস্ত খরচও দিতেন তিনি। শুধু বোনের বাচ্চা নয়, যে কারও বাচ্চা দেখলেই পরম মমতায় তাকে কোলে তুলে নেন শাকিব। এরপর যখন নিজের বাচ্চার জন্ম হয় তখন স্ত্রী অপুর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন সত্ত্বেও বারবার অপুর বাসায় ছুটে গিয়ে বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে নেন শাকিব।

 শুটিংয়ের অবসর অথবা কোনো ভালো খবর পেলে প্রথমেই ছুটে যেতেন সন্তান জয়ের কাছে। গত বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর ট্রফি নিয়ে প্রথমেই অপুর বাসায় গিয়ে জয়কে কোলে নিয়ে তার হাতে ট্রফিটি তুলে দিয়ে বলেন, বাবা এই পুরস্কার আমার নয়, তোমার জন্য। জয়ের কাছে গেলে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলেন না, খাওয়া-দাওয়াও করেন না। জয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় খেলাধুলা করতে করতে একসময় চোখের কোণে অশ্রু আর বুকের বাম অলিন্দে চিনচিনে ব্যথা নিয়ে ফিরে যান শাকিব। কখনো-বা মন কাঁদলে চাচাতো ভাই মনিরকে দিয়ে জয়কে নিজের বাসায় এনে খেলাধুলায় মেতে ওঠেন পিতা-পুত্র।

 জয়ও বাবাকে কাছে পেলে রাজ্যের আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। ভাঙা ভাঙা শব্দে পাপা বলে ওঠে জয়। জয়ের জন্য শাকিব বিদেশ থেকে পানি থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কিছু নিয়ে আসেন। এক কথায় পুত্রের জন্য অন্তপ্রাণ বাবা হলেন শাকিব খান। গত বছরের নভেম্বরে পুত্র জয়কে তার মা অপু বিশ্বাস ঘরে তালাবদ্ধ রেখে কলকাতা গেছেন এমন খবর পেয়ে সদ্য বিদেশ থেকে আসা শাকিব ছুটে যান নিকেতনের বাসায়। জয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে উৎকণ্ঠিত শাকিব কাছের মানুষ, সাংবাদিক, পুলিশসহ সবার কাছে পুত্রকে উদ্ধারে সহযোগিতা চান। এক পর্যায়ে কান্নায়ও ভেঙে পড়েন তিনি। এ ঘটনার সূত্র ধরে ২২ নভেম্বর অপুকে তালাকের নোটিস পাঠান শাকিব।

 এরপর থেকে জয়কে দেখতে আর অপুর বাসায় যান না তিনি। মনিরকে দিয়ে বাচ্চাকে নিজের কাছে আনিয়ে নেন। গত দেড় মাসের লম্বা সময় বিদেশ থাকায় পুত্রকে চোখের দেখা দেখতে না পেয়ে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েন এই শীর্ষনায়ক। আর পুত্রকে দেখতে একদিনের জন্য উড়ে আসেন দেশে। কোনোভাবেই পুত্রকে দেখতে না পেয়ে ছবির শিডিউল দেওয়া থাকায় বুকভরা ব্যথা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে হয় শাকিবকে।  একদিকে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা অন্যদিকে পুত্র জয়কে দেখতে না পাওয়ার মানসিক যাতনা। এ দুইয়ে মিলে শাকিবকে কাহিল করে তোলে। শারীরিকের চেয়ে মানসিকভাবে বেশি বিপর্যস্ত শাকিবকে হাসপাতালেও যেতে হয়। শাকিবের পরিবার বলছে, শাকিবকে কখনো এভাবে ভেঙে পড়তে দেখেননি তারা। পুত্র জয়ের জন্য শাকিব এখন ভুগছেন তীব্র মানসিক যন্ত্রণায়।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn