হুমকি উপেক্ষা করে ভূমি দিবসের কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ৫ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের সতর্কতার তোয়াক্কা না করে এদিন গাজা উপত্যকার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ধেয়ে আসে ইসরায়েলি মারণাস্ত্রের আঘাত, আহত হয় শত শত ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ৫ জন নিহত এবং ৭৮০ জনের আহত খবর দিয়েছে। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এরইমধ্যে ৭ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা আগেই শুক্রবারের কর্মসূচিতে গাজার রক্তাক্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। ভূমি দিবস উপলক্ষে ফিলিস্তিনিদের টানা ছয় সপ্তাহের বিক্ষোভের দ্বিতীয় পর্বে শুক্রবার দিন জোরালো বিক্ষোভের কর্মসূচি সফল করতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয় ফিলিস্তিনিরা। বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান বৃহস্পতিবারই গুলি ছোড়া অব্যাহত রাখার হুমকি দিয়ে রাখেন। রাষ্ট্রীয় রেডিওতে তিনি বলেন, ‘কোনও ধরনের উত্তেজনা দেখা গেলে গত সপ্তাহের মতো করেই কঠোরভাবে জবাব দেওয়া হবে।’শুক্রবার ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি গাজার সীমান্ত বেড়ার পাঁচটি স্থানে জড়ো হলে গুলি ছুঁড়ে জবাব দেয় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।

হুমকি উপেক্ষা করে ভূমি দিবসের কর্মসূচি সফল করতে মাঠে নামে ফিলিস্তিনিরা। পরিত্যাক্ত টায়ার আর পাথর নিয়েই তারা মুখোমুখি হয় ভারি ইসরায়েলি অস্ত্রশস্ত্রের। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন গাজা সীমান্তের নিরাপত্তা বেড়ার পাঁচটি স্থানে বিক্ষোভে সামিল হয়। হারেৎজের খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরের নাবলুস, আল-বিরেহ, রামাল্লাহ ও হেবরন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমটির খবরে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে থেকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধে পাথর ও মলোটোভ ককটেল ছোঁড়া হয়। সেনাবাহিনী গুলি ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দেয়। আল জাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার পাঁচজন নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন কর্মসূচিতে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৬ জনে। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সাফা প্রেস এজেন্সি এরইমধ্যে ৭ জনের নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাত নারী ও ৩১ শিশুসহ শুক্রবার আহত হয়েছে ৭৮০ ফিলিস্তিনি। গাজার উম্মাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আবু আমির আগেই আশঙ্কা করেছিলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদেরকে মুক্তভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেবে না। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ইসরায়েল এ বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে।’ সেই কথাকে সত্যি প্রমাণ করে ভয়াবহ দমন প্রক্রিয়া জারি করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গুলিতে নিহত ৫ জনের নাম পরিচয় জানানো হয়। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলনকে ‘সংগঠিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দেয় ইসরায়েল। সহিংসতার জন্য গাজা এলাকা নিয়ন্ত্রণে নির্বাচিত সংগঠন হামাসকে দায়ী করে দেশটি। তবে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠনটি।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর ৩০ মার্চ ইসরায়েলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ‘ভূমি দিবস’ পালন করছে ফিলিস্তিনিরা। ওইদিন নিজেদের মাতৃভূমির দখল ঠেকাতে বিক্ষোভে নামলে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের স্মরণেই পালিত হয় ভূমি দিবস। ২০০৭ সাল থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। সেখানকার ৭০ শতাংশ মানুষই ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়ে সেখানে এসে বাস করছেন। এবছর ওই দিনটি স্মরণে বিশাল বিক্ষোভের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে। দ্য গ্রেট রিটার্ন মার্চ’ নামে এই বিক্ষোভটি প্রতি বছর আয়োজিত হলেও এবার এতে ভিন্নতা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েরেলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা এবারের ভূমি দিবসকে ভিন্নতা দিয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn