সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গত বৃহস্পতিবার ‘স্টিল দ্য ইলেকশন’ নামে একটি গ্রুপ বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগে গ্রুপটির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরে যান, তাহলে তারা যেন অস্ত্র নিয়ে তৈরি থাকেন। রয়টার্স ও অন্যান্য সংবাদ সংস্থা গ্রুপটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেটি বন্ধ করে ফেসবুক। বন্ধ করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি জানায়, গ্রুপটি নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বৈধতা বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। কিছু সদস্য সহিংসতার আহ্বান জানাচ্ছিলো। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনের সময় ফেসবুক গ্রুপগুলোয় এমন আচরণ খুব বিরল নয়। কিন্তু সব গ্রুপের বিরুদ্ধে একইরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। রয়টার্সের অনুরোধে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপগুলোর ওপর এক জরিপ চালিয়েছে ডিজিটাল গোয়েন্দা সংস্থা কাউন্টারএকশন। ওই জরিপে দেখা গেছে, লাখ লাখ সদস্যের হাজারো রাজনৈতিক ঘরানার গ্রুপগুলোয় সহিংসতাপূর্ণ বাকবিতণ্ডা দেখা গেছে।
কাউন্টারএকশন অনুসারে, গত দুই মাসে ‘লক এন্ড লোড’, ‘উই নিড এ সিভিল ওয়ার’— এরকম সহিংসতাপূর্ণ ২০টি উক্তি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপগুলোয় অন্তত ৪১ হাজার বার দেখা গেছে। আবার ‘শ্যুট দেম’ ও ‘কিল দেম অল’—এর মতো সহিংসতাপূর্ণ উক্তি দেখা গেছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৩৪৫ বার ও ১ হাজার ৪১৫ বার। ‘হ্যাং হিম’ উঠে এসেছে ৮ হাজার ১৩২ বার।একজন মন্তব্য করেছেন ‘টাইম টু স্টার্ট শ্যুটিং, ফোকস’ অর্থাৎ গোলাগুলি শুরুর সময় এসে গেছে, বন্ধুরা। রয়টার্স কাউন্টারএকশনের উপাত্তগুলো ফেসবুককে হস্তান্তর করেছে। ফেসবুক জানিয়েছে, তারা কাউন্টারএকশনের উপাত্ত পর্যালোচনা করছে। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র ডানি লেভার জানান, গ্রুপগুলোর পাশাপাশি বাস্তব জীবনে ক্ষতি ও বিশৃঙ্খলা হ্রাস করতে নীতিমালা প্রণয়ন করবে ফেসবুক। তবে কাউন্টারএকশনের সরবরাহ করা উপাত্তগুলো তাদের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে প্রসিকিউটররা জানান, চলতি বছর ঘটে যাওয়া একাধিক মিলিশিয়া হামলার পরিকল্পনা হয়েছে ফেসবুকে। এর মধ্যে লাস ভেগাসে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও মিশিগানের গভর্নরকে অপহরণ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। গত গ্রীষ্ম থেকে, ইউএস মিলিশিয়া, বুগালো নেটওয়ার্কস ও দ্য কানন কন্সপাইরেসি মুভমেন্টসহ অসংখ্য সংগঠনের ফেসবুকে কার্যক্রম সীমিত করতে নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা আগস্ট থেকে ১৪ হাজার ২০০ গ্রুপ বন্ধ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, মার্কিন নির্বাচনের আগ দিয়ে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বলেছিলেন, ব্যবহারকারীদের কাছে ফেসবুক রাজনৈতিক গ্রুপ ও নতুন গ্রুপ সুপারিশ করা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু তাদের ওই পদক্ষেপ খুব একটা কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। ‘স্টপ দ্য স্টিল’ গ্রুপে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার সদস্য যোগদান করেছে। ২০১৭ সাল থেকে ব্যবহারকারীদের কাছে গ্রুপ সুপারিশ করাকে আগ্রাসীভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে ফেসবুক। সেসময় জাকারবার্গ বলেছিলেন, এতে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ‘অর্থবহ সম্পর্ক’ গড়ে ওঠবে। তখন নাগরিক অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো সতর্ক করেছিল যে, এতে করে চরমপন্থা ও ভুয়া তথ্য আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু সেই সতর্কতা অগ্রাহ্য করে, গত মাস থেকে প্ল্যাটফর্মটি তাদের নিউজফিড ও সার্চ ইঞ্জিনে গ্রুপ সুপারিশ করা শুরু করে। যেকোনো পাবলিক বা উন্মুক্ত গ্রুপগুলো যেকোনো ব্যবহারকারী সন্ধান (সার্চ) করে খুঁজে বের করতে পারেন ও সেটিতে যোগ দিতে পারেন। এছাড়া, কোনো গ্রুপ চাইলে ‘প্রাইভেট’ অপশন ব্যবহার করে অন্যান্যদের কাছ থেকে পোস্ট লুকিয়ে রাখতে সক্ষম। ফেসবুক জানিয়েছে, তারা ফোরাম, বিশেষ করে প্রাইভেট গ্রুপগুলোর ওপর নজরদারি করতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে থাকে। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মেশিন লার্নিং অ্যান্ড মিডিয়া বিষয়ক শিক্ষাবিদ ম্যাথিও হিন্ডম্যান বলেন, সহিংসতা বা উস্কানিমূলক উক্তিগুলো চিহ্নিত করে পর্যালোচনা করতে পারার সক্ষমতা থাকা উচিৎ ফেসবুক এআই’র। তিনি বলেন, ‘শ্যুট দেম’, ‘গেট এ রোপ’-এর মতো হাজারো মন্তব্য যদি মেশিনে ধরা না পড়ে, তাহলে সেটা মেশিনের সমস্যা। একটি আধুনিক ‘মেশিন লার্নিং সিস্টেম’ এই ধরনের মন্তব্য খুঁজে পাচ্ছে না, এমনটা অসম্ভব।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৫৫ বার