সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমনের সংবাদে ৭১ এর রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সবচেয়ে বেশী উৎসাহিত হলেও জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত আমন্ত্রণে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন টেকেরঘাট সাবসেক্টরের কয়েকজন কোম্পানী কমান্ডার,শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। গত ১৪ এপ্রিল শুক্রবার বেলা ৩টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় জানানো হয়,সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতির সাথে তাঁর যুদ্ধদিনের সহকর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন। বিশেষ করে টেকেরঘাট সাবসেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্বাদের অনেকেই রাষ্ট্রপতির সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। বঙ্গভবনে জেলা আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনাকালে রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান ও জজ মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতের সুযোগটিকে একান্তই ব্যক্তিগত সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন। তিনি শহরে বসবাসকারী ও বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থানরত তার প্যানেলভূক্ত  ব্যক্তিগত পছন্দের ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যক্তিগত তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের কাছে জমা দিয়ে উক্ত ৪০ জনের নামে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত পত্র হাতিয়ে নিয়েছেন। টেকেরঘাট সাবসেক্টরের আব্দুল মজিদ চৌধুরী ও সুভাস দাস কোম্পানীর সহ অধিনায়ক দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৩ বারের ডেপুটি কমান্ডার যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএনএম মাহমুদুর রসুল (কমান্ডার গোলাম রসুল),সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ আবুল হোসেনের বিধবা স্ত্রী রহিমা খাতুন, জেলা ইউনিট কমান্ডের প্রতিষ্টাতা কমান্ডার মরহুম শামসউল হকের কন্যা আওয়ামীলীগ নেত্রী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ছিদ্দিকা, টেকেরঘাট সাবসেক্টরের সহ অধিনায়ক মরহুম কাজী বশির উদ্দিন নানু মিয়ার জেষ্টপুত্র কাজী জালাল উদ্দিন জাহান, আব্দুল মজিদ বীর প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি, মুক্তিযোদ্ধা পিয়ারচান বেগম, অকাল প্রয়াত সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী কেবি রশীদ (যোদ্ধাহত) এর পরিবারবর্গ, সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার শাহজাহান বখতের কন্যা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ছাদিয়া বখত সুরভী, সাবেক এমএনএ দেওয়ান ওবায়দুর রাজার পুত্রবধূ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোসাদ্দেক রাজার সহধর্মীনি নাছিমা চৌধুরী এলি, সাবেক এমপিএ মরহুম এমএ রইছ, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও এমপিএ মরহুম আব্দুজ জহুর সাহেবের সন্তানসহ অনেক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মান্যবর রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কেন এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাদের সন্তানদের সাথে এমন জগণ্য আচরন করছেন জানতে চাইলে জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের নির্দেশমতো শুক্রবারই ৪০ জন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা দিয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ যারা বাদ পড়েছেন যেমন যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার এসএনএম মাহমুদুর রসুলসহ আরো যারা তাদেরকে, যারা আসবেননা তাদের জায়গায় কোঅপ্ট করবো নাহয় গুরুত্বপূর্ণ বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি তালিকা পরদিন রবিবার জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করবো। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার নয় হাজী নুরুল মোমেন ৪০ জনের একটি নাম তালিকা শনিবার বিকেলে দিয়েছেন। পরে তার কাছ থেকে কোন তালিকা আর পাওয়া যায়নি। বিষয়টিকে হাজী নুরুল মোমেনের নিছক বাড়াবাড়ি ও ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে এহেন হীনমন্যতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জালাল উদ্দিন জাহান বলেন, হাজী নুরুল মোমেনের বাড়ী কিশোরগঞ্জ জেলায়। তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের একজন সক্রিয় নেতা ছিলেন। ২০০১ ইং সনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনি কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের বিএনপি সমর্থিত স্বঘোষিত চেয়ারম্যান কবির খানের সমর্থিত জেলা ইউনিট কমান্ডার ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ড এর কার্যালয়ে সংরক্ষিত জাতির জনকের ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি নামিয়ে নিয়ে বাথরুমে রেখে অবমাননাকর অপরাধ করেছিলেন। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তিনি দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছেন। তার দলবাজীর কারনে জেলায় মুক্তিযোদ্ধারা আজ দ্বিধাবিভক্ত ও অধিকার বঞ্চিত। তিনি কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের হেলাল গ্রুপ করেন বলে অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী গ্রুপের কোন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহ্য করতে পারেননা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মান্যবর রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদ এডভোকেট সাহেবের সাথে সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার সম্পর্ক। ৭১ সালে তিনি যখন দেশের সর্বকনিষ্ট এমপিএ ছিলেন তখনই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে টেকেরঘাট সাবসেক্টরসহ ৫নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির যুদ্ধদিনের সেইসব সহকর্মীরা ১৭ এপ্রিলের সুনামগঞ্জ সফরটিকে তাদের অনেকের জীবনের শেষ সুযোগ মনে করেছিলেন। কিন্তু হাজী নুরুল মোমেন তাদের অনেকের জীবনের শেষ ইচ্ছা ও সুযোগটিকে তার ব্যক্তিগত সুযোগে পরিণত করে হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ কর্মসুচিকে নিয়ে হাজী নুরুল মোমেনের দলবাজীর ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল বলেন, হাজী নুরুল মোমেন তার ব্যক্তিগত গ্রুপের একাংশের স্বার্থে নাম তালিকা সরবরাহ করছেন। এখানে আমার পিতা যুদ্ধকালীন কমান্ডার এসএনএম মাহমুদুর রসুলসহ অনেককে ইচ্ছেকৃতভাবে কথিত তালিকায় উপেক্ষা করেছেন বলে জানানোর পরও আমি জেলা প্রশাসকের কাছে কোন ইনসাফ পাইনি। অভিযোগের ব্যপারে জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn