মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় বসত ঘরে আগুন লেগে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ( ২৫ এপ্রিল) দিনগত রাতে রাজনগর সদর ইউনিয়ন ভোজবল গ্রামের ওয়াছির মিয়ার বাড়িতে ফ্রিজ বিস্ফোরণ হলে ঘটনাস্থলেই তার মেয়ে শাহিনা বেগম (২৪) নিহত হন। এসময় দগ্ধ হন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৫৫)। বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে রোকেয়াও মারা যান। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন ওয়াছির মিয়ার ছেলে মুন্না আজিজ (২৭)। তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইতালী প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে শাহিনার বিয়ের বিষয়ে পাকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক ভাবে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে ফ্রিজের কমপ্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ঢলেপড়লেন মৃত্যুর কোলে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ভুজবল গ্রামের প্রবাসী ওয়াছির মিয়া গত একবছর আগে দেশে ফিরে এলে স্ট্রোক করে মারা যান। তার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে আগেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। এক ছেলে মুন্না আজিজ ও মেয়ে শাহিনা আক্তার ছিলেন বিয়ের বাকি। শাহিনা আক্তার মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ভাই মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ছেন। শাহিনা আক্তারকে তার ভাই মুন্না বৃধবার বিকালে নানার বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলীলপুর ইউনিয়নের আলাপুর গ্রাম থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরেই ঘটে মর্মান্তিক এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা।

প্রত্যক্ষদর্শী রোকেয়া বেগমের প্রতিবেশি দেবর শামছুল হক (৫২) বলেন, গভীর রাতে বিস্ফোরনের শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হন। বের হয়েই দেখতে পান রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার কলাপসিবল গেটের সামনে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। তিনি সামনে যেতেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার বাঁচানোর আকুতি জানান। এসময় তিনিও চিৎকার করতে থাকেন। বেরিয়ে আসেন আশেপাশের লোকজন। কলাপসিবল গেট তালা দেয়া থাকায় দরজা খোলা যাচ্ছিল না। ঘরে আগুন জ¦লছিল দাউ দাউ করে। পাশের বাড়ির একজন শাবল নিয়ে আসেন। এর আগেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তারের গায়ে আগুন ধরে যায়। গেটের তালা ভাংতে ভাংতেই পুড়ে যান মা মেয়ে। তালা ভেঙ্গে যখন বের করা হয় তখন তারা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছেন। ধরা যাচ্ছিল না। শামছুল হক আরও বলেন, তার পরনে হাফ পেন্ট থাকায় লুঙ্গি খুলে তাদের কে ধরে ঘর থেকে বের করেন। এসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শাহিনা আক্তার। এদিকে ভাই মুন্না আজিজ ঘরের পূর্ব পাশের বাথরুমে ঢুকে পানি ঢালতে থাকেন। এরপরও তার পিঠ ও বাঁ পাশ পুড়ে গেছে। তাকেও বের করে নিয়ে আসেন। এরই মাঝে খবর পেয়ে রাজনগর থানার পুলিশ ও মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। পরে এম্বুলেন্স আসার পর মুন্না আজিজ ও মা রোকেয়া বেগমকে সিলেট ওসমানী মেডকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এলাকায় রোকেয়া বেগম মারা যান। পরে তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয় এবং মুন্না আজিজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। ভোরে শাহিনা আক্তারের লাশ রাজনগর থানা পুলিশ মৌলভীবাজার মর্গে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে মা মেয়ের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। রোকেয়া বেগমের ভাই দুবাই থেকে দেশে আসার পর আজ (শুক্রবার) লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন রোকেয়া বেগমের  ভাই।রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, ফ্রিজের পাশে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে কমপ্রেসার বিস্ফুরণ ঘটে। এতে ঘরে আগুন লেগে যায়। সে আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহিনা আক্তার ঘটনাস্থলে ও মা রোকেয়া বেগম ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। উভয়ের লাশের ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে। থানায় অপমৃত্যু মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn