কয়েক মাস প্রচারণার পর, যুক্তরাজ্য তার নতুন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। যদিও তিনি প্রাক্তন চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক নন, কনজারভেটিভ দলের নেতারা ভরসা রাখলেন ব্রিটিশ নেত্রী লিজ ট্রাসের উপর। কিন্তু কেন? এত লড়াই করেও কেন ব্রিটেনের কুরসিতে বসা হল না সুনাকের ?

ট্যাক্স লন্ডারিং

দুর্ভাগ্যবশত সুনাকের নির্বাচনী প্রচারে সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে উঠেছেন তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি, যিনি হলেন ভারতীয় ধনকুবের এবং ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির কন্যা। দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঋষিকে তাঁর সম্পত্তি সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল, নির্বাচনের আগে জানা যায় তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮৪০ মিলিয়ন এবং তাকে নিয়মিতভাবে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী এমপি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুনাকের সিংহভাগ সৌভাগ্য অক্ষতার সাথে তার বিবাহ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল যিনি ইনফোসিসে ৭৯৪ মিলিয়ন মূল্যের ০.৯৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক। সানডে টাইমসের মতে, ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের চেয়েও বেশি ধনী বলে দাবি করা হয়েছে অক্ষতাকে। অক্ষতা তার পরিবারের আইটি ব্যবসা থেকে সংগ্রহ করা লভ্যাংশের ট্যাক্সে লক্ষ লক্ষ পাউন্ড বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল। পেশার কারণে অন্যান্য দেশ থেকে ব্রিটেনে আসা নাগরিকদের বিশেষ কর দিতে হয়। সুনাকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে সেই কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। তিনি নাকি প্রভাব খাটিয়ে সেই করের আওতার বাইরে চলে আসেন। গত বছর, তিনি ১১.৬ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের লভ্যাংশ প্রদান করেছেন। ইস্যুটি একটি বড় বিতর্ক তৈরী করেছিল, বিতর্কে ইতি টানতে অক্ষতা বিদেশী আয়ের উপর আরও কর দিতে রাজি হন। তবে ততক্ষণে যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে।

সুনাকের কর নীতি

ট্রাসের পক্ষে নির্বাচনী হাওয়া ঘুরিয়ে দেওয়ার সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি ছিল কর না কাটানোর নীতি। তার প্রতিপক্ষ, ট্রাস অবশ্য বিশ্বাস রেখেছিলেন যে ট্যাক্স কাটার ফলে অর্থনীতিকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। যদিও ট্রাসের তাত্ক্ষণিক ট্যাক্স কাটার পদক্ষেপ অর্থনীতিবিদদের অনুমোদন পায়নি, তবে এটি নিশ্চিতভাবে কনজেরভেটিভ নেতাদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। এই পর্যায়েই ট্রাস দৌড়ে সুনাককে পিছনে ফেলে এগিয়ে  যেতে শুরু করেন। ব্যবধান আরও প্রসারিত হচ্ছে তা অনুধাবন করে, সুনাক এবং তার দল ঘোষণা করেছিলেন যে ক্ষমতায় নির্বাচিত হলে তিনি ২০২৯সালের মধ্যে আয়করের মূল হার ২০ শতাংশ কমিয়ে দেবেন। সুনাক দাবি করেছিলেন যে তার তাৎক্ষণিক লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করা। সুনাক কয়েক মাস ধরে সোচ্চারভাবে জ্বালানি বিলের উপর ভ্যাট বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । যদিও ভোট টানতে তাঁর ট্যাক্স নীতি খুব একটা কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি।

গ্রিন কার্ড বিতর্ক
যদিও অক্ষতা মূর্তির ট্যাক্স বিতর্ক কিছুটা ধামাচাপা দেয়া গিয়েছিল, তারপরেও সুনাকের মুখ পুড়িয়েছিল গ্রিন কার্ড বিতর্ক। কারণ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যে সুনাক ব্রিটেনে ফিরে আসার পরেও তাদের মার্কিন গ্রিন কার্ড ধরে রেখেছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ সদস্যরা যুক্তরাজ্যের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশাকে ধূলিসাৎ করে দেন। একজন সিনিয়র টরি নেতা দ্য অবজারভারকে জানিয়েছেন, ”সুনাক বিশাল নির্লজ্জতা দেখিয়েছেন এবং যেভাবে তিনি তার বিষয়গুলি সাজিয়েছেন তা থেকে বোঝা যায় না যে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে একটি বিষয় প্রমাণিত তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যারিয়ারের বিকল্প পথ খোলা রেখেছেন।” যদিও  মিডিয়ার চাপে পড়েই সুনাক পরে নিশ্চিত করেন যে তিনি ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “গ্রিন কার্ড” ছেড়ে দিয়েছিলেন ।

সুনাকের বিলাসবহুল জীবনযাপন

WION দ্বারা রিপোর্ট করা হয়েছে, জুলাই মাসে, সুনাক উত্তর ইংল্যান্ডের টিসাইডে একটি বিল্ডিং সাইট পরিদর্শন করেছিলেন যেখানে তাকে ৫৯৫ ডলার মূল্যের প্রাদা সোয়েড লোফার পরা অবস্থায় দেখা গেছে। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা সুনাক সেই সময়ে মেয়র বেন হাউচেনের হয়ে সমর্থন সংগ্রহ করতে টিসাইডে গিয়েছিলেন। তবে সেই বিষয়টি গৌণ হয়ে যায়, তাঁর বহুমূল্য পোশাকের সামনে। এই প্রথমবার নয় যে সুনাক তার ব্যয়বহুল জীবনযাপনের জন্য শিরোনাম অর্জন করেছিলেন। ২০২০ সালে, দেশের চ্যান্সেলর হিসাবে, তাকে প্রথাগত প্রাক-বাজেট ফটোগ্রাফে ২২০ ডলারের একটি মগ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এখানেই শেষ নয়, গত মাসে যখন প্রবল গরম পড়েছিল ব্রিটেনে তখন উত্তর ইয়র্কশায়ারের প্রাসাদে একটি পুল তৈরী করতে  ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ডলার  খরচ করে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়েন সুনাক। একইভাবে, যখন সুনাক প্রধানমন্ত্রী পদে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি থেকে একটি ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয় যেখানে সুনাককে তার “অভিজাত” বন্ধুদের সম্পর্কে কথা বলতে দেখা যায়। কেউ কেউ মনে করেন, নিজের স্বার্থে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পিছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন সুনাক। বরিসকে ইস্তফা দিতে কার্যত বাধ্য করেছিলেন বলেও অভিযোগ। তবে প্রচারে ঝড় তুললেও শেষ রক্ষা হলো না। প্রধানমন্ত্রীর কুরসিতে বসা হল না ঋষি সুনাকের। আশা জাগিয়েও ছোঁয়া হল না মাইলস্টোন। সূত্র : wionews.com

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn